মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা সরকারের পতন হলেও এখনও রাস্তায় জেন-জি আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি— প্রেসিডেন্ট ও সদ্য বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং রাজধানী আন্তানানারিভোর প্রশাসককে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে সংলাপের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, পানির সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেওয়া হবে। রাজোয়েলিনা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে, তবে নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রীরা অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন। তবে, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আবেদন তিন দিনের মধ্যে গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু তার এ প্রতিশ্রুতিতে তরুণদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানায়, প্রতিশ্রুতি নয়—তাদের দাবি প্রেসিডেন্ট ও সদ্য বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রীর দায় স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এক দুজন মন্ত্রী নয়, পুরো সরকারকেই পদত্যাগ করতে হবে।
পরদিন মঙ্গলবারও (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভ চলে। প্ল্যাকার্ড হাতে তরুণরা স্লোগান দেয়—“আমাদের পানি চাই, আমাদের বিদ্যুৎ চাই, রাজোয়েলিনা পদত্যাগ করো।” রাজধানী থেকে ফেনোয়ারিভো পর্যন্ত মিছিল ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাজধানী থেকে ৫১০ কিলোমিটার দূরের মাহাজাঙ্গা এবং ৯৫০ কিলোমিটার দূরের দিয়েগো সুয়ারেজেও একই দাবিতে তরুণরা রাস্তায় নামে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত ও ১০০র বেশি আহত হয়েছেন। তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংখ্যা অস্বীকার করে বলেছে, জাতিসংঘের তথ্য গুজব ও ভ্রান্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
কেনিয়া ও নেপালের জেন জি আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চারদিন ধরে মাদাগাস্কারে এই বিক্ষোভ চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এটিই সবচেয়ে বড় আন্দোলন, যা ২০২৩ সালের নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত রাজোয়েলিনার জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজোয়েলিনা প্রথম ক্ষমতায় আসেন ২০০৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। ২০১৪ সালে সরে দাঁড়ালেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি তৃতীয় মেয়াদে জয় পান, যদিও তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন।