Saturday 04 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গত বছরের তুলনায় আম রফতানি বেড়েছে ৮৬৭ টন

এমদাদুল হক তুহিন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৫৬ | আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০৮

আম। ফাইল ছবি

ঢাকা: চলতি বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২ হাজার ১৮৮ টন আম রফতানি করেছে বাংলাদেশ। গতবছরের তুলনায় যা ৮৬৭ টন বেশি। তবে রেকর্ড রফতানি হওয়া ২০২৩ সালের তুলনায় তা ৯১২ টন কম। চলতি বছর প্রথমবারের মতো রফতানি তালিকায় যুক্ত হওয়া চীনে রফতানি হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫ টনের মতো আম। এদিকে আম রফতানির পথে এখনো প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে বিমান ভাড়াকে। পাশ্বর্বর্তী দেশের মতো বিমান ভাড়া ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ঘটলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও বেশি আম রফতানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৮ টন আম রফতানি হয়েছে। এরমধ্যে সৌদি আরবে ৩৫৬ টন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫০ টন, কাতারে ১৬৩ টন, ওমানে ২১ টন, কুয়েতে ১৬৭ টন, বাহরাইনে ৫৫ টন, সিঙ্গাপুরে ৪৭ টন, মালদ্বীপে ১৩ টন, কানাডায় ৪৫ টন ও হংকংয়ে ৩ টন আম রফতানি হয়েছে। যুক্তরাজ্যে রফতানি হয়েছে ৬৮৬ টন, জার্মানিতে ৬০ টন, ইতালিতে ২৬৪ টন, ফ্রান্সে ৪০ টন, সুইডেনে ৫০ টন, আয়ারল্যান্ডে ১১ টন, সুইজারল্যান্ডে ২০ টন, নেদারল্যান্ডে সাড়ে ৪ টন, চীনে ৫ দশমিক ২২ টন, গ্রিসে ১ দশমিক ৭৩ টন, ডেনমার্কে ৩ টন, অস্ট্রিয়ায় ৩ টন, বেলজিয়ামে ৪ টন ও যুক্তরাষ্ট্র ৩.৮৩ টন আম রফতানি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড ৩ হাজার ১০০ টন আম রফতানি হয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩২১ টনে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আম রফতানি হয়েছিল ১ হাজার ৭৫৭ টন। এর আগের ৫ অর্থবছরে আম রফতানির পরিমাণ ছিল এক হাজার টনেরও কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৯ টন আম রফতানি হয়। তা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৯১ টনে গিয়ে ঠেকে। অর্থাৎ, দেশে আম রফতানির ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। তথ্যমতে, কেবলমাত্র গতবছর আগের বছরগুলোর তুলনায় আম রফতানি কমেছে। গতবছর আমের ভর মৌসুম জুলাই-আগস্টে দেশে ঘটে যাওয়া জুলাই অভ্যুত্থানের কারণে আম রফতানি কম হয়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৭ সালে আম রফতানির পরিমাণ ছিল ৩০৯ টন। ২০১৮ সালে ২৩১ টন, ২০১৯ সালে ৩০৮ টন, ২০২০ সালে ২৭৯ টন, ২০২১ সালে ৭৯১ টন, ২০২২ সালে ১ হাজার ৭৫৭ টন, ২০২৩ সালে ৩ হাজার ১০০ টন, ২০২৪ সালে ১ হাজার ৩২১ টন ও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১৮৮ টন আম রফতানি হয়েছে।

দেশে রফতানিযোগ্য আমের উৎপাদন বাড়াতে গেল কয়েকবছর ধরে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এই প্রকল্পের অধীনে রফতানিযোগ্য আমের উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষকদের নানা সুযোগ দিয়ে থাকে। ‘রফতা‌নি‌যোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প’এর প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামগ্রিক আম রফতানির ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আম রফতানির ক্ষেত্রে ফরওয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে কাজ করতে হয়। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে আমরা মাঠ পর্যায়ে গুণগত আম উৎপাদনের জন্য যা যা করার দরকার- তা আমরা করেছি। এখন ফরওয়ার্ড লিংকেজে কিছু সমস্যা রয়েছে। বিমান ভাড়া ও অন্যান্য কিছু বিষয় রয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে।’

আরও পড়ুন

চীনে মাত্র সাড়ে ৫ টনের মতো আম রফতানির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীনের ক্ষেত্রে একটি কোম্পানিকে তারা কোয়ালিফাই করেছে। আর সেই কোম্পানির চীনে আম রফতানির অভিজ্ঞতা ছিল না। এবার যেহেতু শুরু করেছে, প্রতিযোগিতামূলক ওই বাজারে প্রবেশ করেছে মাত্র। শুরুর বছরে হয়তো কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। সামনের বছর চীনে আম রফতানি আরও বাড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

মোহাম্মদ আরিফুর রহমান আরও বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে বিমান ভাড়া বেশি। এটি প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে নেই বলে শুনেছি। পার্শ্ববর্তী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় আমাদের এয়ার ফেয়ার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নেই। এ কারণে রফতানিকারকরা হয়তো পিছিয়ে রয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে আম রফতানির ট্রেন্ড ভালো। আম রফতানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যে কৃষিপণ্য রফতানি হয়, তার চার ভাগের এক ভাগই আম। এটির একটি সম্ভাবনা রয়েছে। বাজারও ভালো আছে। এখন এই বাজারটি ধরতে ফরওয়ার্ড লিংকেজে কিছু কাজ করতে পারলে রফতানি আরও বাড়বে। ফরওয়ার্ড লিংকেজ বলতে বিমান ভাড়া, প্যাকেজিং, ট্রিটমেন্ট ও হটওয়াটার ট্রিটমেন্ট- এ বিষয়গুলোতে উন্নতি ঘটাতে হবে। এরমধ্যে বিমান ভাড়া কমলেই রফতানি অনেকটা বেড়ে যাবে। বাকি কাজগুলো ধীরে ধীরে হচ্ছে।’

অধিক বিমান ভাড়াকেই আম রফতানির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসাবে দেখছেন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসূর। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এবার আম রফতানি কম হয়েছে বিমান ভাড়ার কারণে। পরিবহণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে, এ কারণে রফতানি কমে গেছে। ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বিমান ভাড়া বেশি থাকায় আমাদের রফতানি বাড়ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপ আম রফতানির প্রধান গন্তব্য। মধ্য প্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশেও আম রফতানি হচ্ছে। তবে উৎপাদনের এক বা দুই ভাগ আমও আমরা রফতানি করতে পারছি না। অনেকটা বাগান থেকে উঠিয়ে এনে প্যাকেজিং করে আম রফতানি করছি। নতুন মার্কেটেও সেভাবে প্রবেশ করতে পারছি না। চীনে একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় সেভাবে আম রফতানি হচ্ছে না। ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করা যাচ্ছে না। আম রফতানিতে সরকারের আরও সহযোগিতা লাগবে।’

তথ্যমতে, কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি আম রফতানি হয়ে আসছে। আর একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি আমের বড় বাজার। এসব দেশের বাইরে অস্ট্রিয়া, বাহরাইন, বেলজিয়াম, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আয়ারল্যান্ড, জর্ডন, লেবানন, মালদ্বীপ, নেদারল্যান্ড, ওমান, পুর্তগাল, কাতার, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, সোয়াজিল্যান্ড ও সুইডেনসহ আর কয়েকটি দেশে আম রফতানি হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশও আমের বড় বাজার।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

আম রফতানি চীন সম্ভাবনা

বিজ্ঞাপন

আরো

এমদাদুল হক তুহিন - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর