রংপুর: পীরগাছা ও মিঠাপুকুরের পর এবার কাউনিয়া উপজেলায়ও অ্যানথ্রাক্সের ছায়া নেমেছে। নতুন করে দুজনের শরীরে এই ভয়াবহ জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় রংপুর জেলায় মোট ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত নিশ্চিত হয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কর্মীরা সতর্কতা অবলম্বন করে নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু রোগের বিস্তার রোধে জোরদার প্রচেষ্টা চলছে।’
তিনি জানান, এর আগে পীরগাছায় ৮ জন এবং মিঠাপুকুরে একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় এই রোগের উপসর্গে দুজন মারা যান এবং চারটি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরীক্ষায় অসুস্থ গরুর মাংস থেকে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়ন থেকে ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে, যার মধ্যে ৮ জনের রোগ নিশ্চিত হয়। একইভাবে মিঠাপুকুরের ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামে ১৫ সেপ্টেম্বর কৃষক ইব্রাহিম মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে জবাই করা হয়। আশপাশের লোকজন মাংস কাটাকাটি করেন এবং দুই দিন পর কয়েকজন চর্মরোগে আক্রান্ত হন। তাদের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানোর পর একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) এমএ হালিম লাবলু বলেন, ‘ইমাদপুরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে রোগগ্রস্ত হয়েছেন। তবু রোগী যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সেজন্য তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।’
চিকিৎসকদের মতে, অ্যানথ্রাক্স প্রধানত চামড়ায় ঘা সৃষ্টি করে এবং গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ায়, তবে মানুষ থেকে মানুষে নয়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা বলেন, ‘আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আমরা সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নজরদারি জোরদার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘শুরুতে পীরগাছায় সীমাবদ্ধ এই রোগ এখন কাউনিয়া ও মিঠাপুকুরে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্য কর্মীরা জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজ ত্বরান্বিত করেছেন, যাতে আরও কোনো প্রাণহানি না ঘটে।’
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ বিভাগও গবাদিপশুর টিকাকরণ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে রোগের উৎস রোধ করা যায়।’