ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের একটি বেসামরিক নৌবহরে হস্তক্ষেপ করেছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। এই বহরের অন্তত আটটি নৌযানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মীকে আটক করেছে ইসরায়েল। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ পরিবেশকর্মী ও জলবায়ু আন্দোলনের পরিচিত মুখ গ্রেটা থুনবার্গ।
বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে ভূমধ্যসাগরে গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ঘটনাটি ঘটে।
আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থানরত অবস্থায় নৌবহরের ওপর চড়াও হয় ইসরায়েলি বাহিনী। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটটি নৌযান—দেইর ইয়াসিন, হিউগা, স্পেক্টার, আদারা, আলমা, সিরিয়াস, আরোরা ও গ্রান্ডি ব্লু থামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলোর আরোহীদের আটক করে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আটক গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনা।
পরবর্তীতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘হামাস-সংশ্লিষ্ট ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান নিরাপদে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের আরোহীদের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেটা থুনবার্গ ও তার সঙ্গীরা সুস্থ ও নিরাপদ আছেন।’
তারা আরও দাবি করে, এই ফ্লোটিলার সঙ্গে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোগসাজশ রয়েছে। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করেনি ইসরায়েল।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে ‘অপহরণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জলসীমায় কোনো ধরনের আইন না ভেঙেই তারা মানবিক ত্রাণ পৌঁছাতে চেয়েছিল।
তারা বলেছে, ‘ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো মানুষদের অপহরণ করা হয়েছে। ফ্লোটিলা কোনো আইন ভাঙেনি। বরং অবৈধ হচ্ছে গাজার অবরোধ, সেখানে চলমান জাতিগত নিধন এবং অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার।’
এই নৌবহরটি গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে যাত্রা করেছিল। এতে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ অন্তত ৪৪টি দেশের ৫০০ জনের বেশি অংশগ্রহণকারী। এদের মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন অধিকারকর্মী রয়েছেন।
ফ্লোটিলার যাত্রা শুরু হয় গত ৩১ আগস্ট, স্পেনের বার্সেলোনা থেকে। এরপর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি ও গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকেও আরও কিছু নৌযান এই বহরে যোগ দেয়। বর্তমানে এই বহরে ৪০টির বেশি নৌযান রয়েছে। তারা সমুদ্রপথে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল।