ঢাকা: রাশিয়ার অন্যতম বৃহৎ পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর অধীন প্রতিষ্ঠান ‘অবনিন্সক টেক একাডেমি’ কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্বের শীর্ষ ৫০ জন নারী নেত্রীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাবিতা বিনতে আজাদ শিফা। তিনি ‘ভিলেজ এমপাওয়ারমেন্ট’ প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
আন্তজার্তিক বিভিন্ন অঙ্গনে কাজ করে শিফা দেশের তরুণদের যোগাযোগ দক্ষতা এবং সফট স্কিল বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পড়াশোনার সুবাদে ঢাকা শহরে তিনি দেখেছেন, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র নিজেদের সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারার কারণে পিছিয়ে পড়ে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘ভিলেজ এমপাওয়ারমেন্ট’।
এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের তরুণদের আত্মবিশ্বাস এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছেন। তার লক্ষ্য, ২০২৭ সালের মধ্যে এই কর্মসূচির মাধ্যমে এক লাখ শিক্ষার্থীকে দক্ষ করে তোলা। তিনি বিশ্বাস করেন যে, একজন মানুষ যদি তার সফট স্কিলগুলো শাণিত করতে পারে, তাহলে নিজের জীবনের পথ সে নিজেই তৈরি করে নিতে পারবে।
তার এই অর্জন নারীদের এক অনন্য অনুপ্রেরণার নাম। বিভিন্ন দেশের শত শত আবেদনকারীদের মধ্য থেকে কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ জন নারী নেত্রীর একজন নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এই তালিকায় স্থান করে নিতে তার পূর্ববর্তী কর্মঅভিজ্ঞতা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম এবং গবেষণাকর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা শিফার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে যে, পৃথিবীর অনেক ভালো মানুষ রয়েছে, এবং তারা একে অপরের সংস্কৃতিকে সম্মান করে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি বিভিন্ন দেশের সেরা তরুণ-তরুণীদের নেতৃত্ব দেখতে পেয়েছেন এবং তা থেকে নিজেকে আরও উন্নত করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
শিফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বাইরে আমি মানেই বাংলাদেশ। সেখানে আমার পরিচয় হয়ে যায় বাংলাদেশ। আমাকে দেখে কত শত মানুষ বাংলাদেশকে চিনেছে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে আরও বেশি দায়িত্বশীল করে তুলেছে।’
শিফার জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সমাজসেবার প্রতি তার গভীর ভালোবাসা, যা তিনি শিখেছেন বাবা-মায়ের কাছ থেকে। এই ভালোবাসার প্রতিফলন হয় সমাজকর্ম বিভাগে পড়াশোনা করে। সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হয়ে তিনি বুঝতে পারেন, ‘সমাজকর্মের শিক্ষার্থীরা যদি ডায়নামিক হতে পারে, তাদের রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা।’ এই দর্শনকে বুকে ধারণ করেই তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত করেছেন নিজেকে। তার এই প্রচেষ্টা তাকে আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন ইন্টারন্যাশনাল’-এ রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রকল্পে লিড প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
শিফার সাফল্যের পেছনে তার বাবা-মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ এবং মা সোহরাত বেগম। দুজনেই ছিলেন জ্ঞান, অনুপ্রেরণা ও নীতি-নৈতিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সততা, নিষ্ঠা এবং নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা পেয়েছেন ছোটবেলা থেকেই। বাবা-মায়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ এবং সমর্থনই তাকে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, শিফা তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, নারীদের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা এখন অনেক সহজ। ঘরে বসেই ইংরেজি শেখা, নতুন ভাষা বা কোডিং শেখার মতো দক্ষতাগুলো অর্জন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আপনাকে আপনার গোল জানতে হবে। নিজের লক্ষ্যকে যদি আপনি বড় বানিয়ে ফেলেন, ছোট ছোট বাধাগুলো খুব সহজেই সমাধান হয়ে যায়।’