বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মহা ধুমধামে অঞ্জলি, আরতি, পূজা–অর্চনায় শারদীয় দুর্গোৎসব মুরু হয়ে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো এ উৎসব। সকালে শুরু হয় দেবীর দশমী বিহিত পূজা। এরপর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসন শেষ হয়। গত রোববার দেবীর পূজা শুরু হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন জেলায় কেমন হলো প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা।
সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো প্রতিবেদন—

বিজয় দশমীর মধ্য দিয়ে রাজবাড়ীতে শেষ হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
রাজবাড়ী: শহরের বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে সিঁদুরের লাল রঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিয়ে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেছেন ভক্তরা। লাল-সাদা শাড়িতে নেচে-গেয়ে নারীরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান। রাজবাড়ী পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহবায়ক অনিন্দিতা গুহ (বাণী) বলেন, আমরা রাজবাড়ী পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্যরা নিয়মিত মন্দির পরিদর্শন করছি। এবারের পূজা শান্তিপূর্ণভাবে, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে এবং ভক্তদের অংশগ্রহণে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কারণে এ বছর সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পেরেছেন বলেও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করতে পুলিশ সার্বক্ষণিক ভাবে কাজ করেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছিল। রাতে ও দিনে আমাদের টহল পুলিশ নিয়মিত ভিজিট করছে। পূজা নিয়ে যাতে গুজব না ছড়াই সেটা নিয়ে আমাদের একটি টিম কাজ করছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য আনসার, গ্রাম পুলিশ, পুলিশ মোতায়েন ছিল। এছাড়া র্যাব, সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ছিল। এছাড়া আমিও নিজেও নিয়মিত মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছি।

কুষ্টিয়ায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব
কুষ্টিয়া: দশমী পূজা শেষে বিকেল ৫টার পর কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য প্রতিমা গড়াই নদীতে নিয়ে যাওয়া হয়। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি অশ্রুসজল নয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদায় জানান মা দুর্গা ও তার সন্তানদের। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সনাতন ধর্মালম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব। এ বছর কুষ্টিয়া জেলায় ২৫০টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যার আগেই প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে।

সিলেটে প্রতীমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব
সিলেট : সিলেটে বিজয়া দশমী শেষে ভক্তদের উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। পাঁচ দিনব্যাপী এ দুর্গোৎসব উদ্যাপন শেষে বিকেল থেকে সিলেটের চাঁদনী-ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ সিলেট মহানগর এবং জেলা শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৬১৮ টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট মহানগরে সার্বজনীন ১৪২ টি ও পারিবারিক ২০ টি মিলিয়ে মোট ১৬২ টি এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সার্বজনীন ৪২৭ টি ও পারিবারিক ২৯ টি মিলিয়ে মোট ৪৫৬ টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য সিলেটে এবারই প্রথম মহাঅষ্টমিতে (৩০ সেপ্টেম্বর) কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন
কক্সবাজার : বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৫টার দিকে আলোচনা সভা শেষে একে একে প্রতিমাগুলো সৈকতের লাবণী পয়েন্ট অংশে সমুদ্রের জলরাশিতে বিসর্জন দেওয়া হয়। কক্সবাজারের বিভিন্ন মন্দির থেকে ৪২টি প্রধান প্রতিমার সঙ্গে এসেছে ছোট-বড় প্রায় ২৫০ প্রতিমা। এ উপলক্ষ্যে লাবণী পয়েন্টে আয়োজন করা হয় সম্প্রীতি সমাবেশ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ। প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ও আশপাশে ছিল কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। জেলা পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর ডুবুরি দল প্রস্তুত ছিল দুর্ঘটনা এড়াতে। ধর্মীয় উৎসব ঘিরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট পরিণত হয় সম্প্রীতির মিলনমেলায়।

ময়মনসিংহে আনন্দ-বেদনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন
ময়মনসিংহ: আনন্দ-বেদনা এবং উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব শেষ হলো। আগামী বছর ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে ভক্তরা অশ্রুসজল নয়নে দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গাকে বিদায় দিয়েছে। পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের শেষ দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠানের পর দর্পণ বিসর্জন এবং শান্তি জল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শাস্ত্রীয় বিসর্জন। আর্যধর্ম জ্ঞান প্রদায়িনী সভার উদ্যোগে নগরীর দুর্গাবাড়ি মন্দির থেকে বিকেলে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভা যাত্রায় জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। ময়মনসিংহ জেলার ১৩টি উপজেলায় পারিবারিক ও সার্বজনীন মিলিয়ে ৭৮১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে নগরীরতে ৯০ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার হয়েছে।