ঢাকা: উত্থান-পতনে পুঁজিবাজারে টালমাটাল চিত্র দীর্ঘদিনের। মাঝেমধ্যে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা সামান্য বাড়লেও প্রায় প্রতি মাসেই কিছু না কিছু বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। চলতি পঞ্জিকা বছরের গত ৯ মাসে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন প্রায় ৩০ হাজার বিনিয়োগকারী। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে আরও প্রায় ৩২ হাজার বিনিয়োগকারীর বিও (বেনিফিশিয়ারি অব ওনার্স) হিসাব শেয়ার শূন্য হয়েছে। সে হিসাবে ৯ মাসে মোট ৬২ হাজার বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বলা যায়।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে মোট বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৫২টি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ২২৭টি। অর্থাৎ গত ৯ মাসে বিও হিসাব কমেছে ৩০ হাজার ২২৫টি।
অন্যদিকে গত বছরের ডিসেম্বর শেষে শেয়ার রয়েছে- এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৯টি। ওইসব বিও হিসাবে মোট শেয়ার ও ইউনিট ছিল ১০ হাজার ১৫৬ কোটি। ওই সময়ে সেগুলোর বাজার মূল্য ছিল ৩ লাখ ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিও হিসাবের মধ্যে শেয়ার রয়েছে- এমন বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৯ হাজার ২০৭টি। এসব হিসাবে মোট ১০ হাজার ২৫৭ কোটি শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে। এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
সিডিবিএল-এর হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে শেয়ার শূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৯৭৪টি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫৯টি। অর্থাৎ ৯ মাসে শেয়ার শূন্য বিও হিসাব বেড়েছে ৩১ হাজার ৮৮৫টি।
একটি ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি একটি আতঙ্ক বিরাজমান। তাছাড়া, বাজারে আস্থা বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থারও তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে নতুন কোনো প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসেনি। এসব কারণে অনেক বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়ে বেরিয়ে গেছেন।
ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বার্ষিক ফি কমানো হয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের ধরে রাখতে সহায়তা করবে। তাছাড়া বাজার দীর্ঘমেয়াদে ভালো করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এগুলোর প্রতিফলন আসতে শুরু করলে বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
সিডিবিএল-এর তথ্যানুসারে, সেপ্টেম্বর শেষে মোট ১৬ লাখ ৩২ হাজার ২২৭টি বিও হিসাবের মধ্যে পুরুষ বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪৭৬টি। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১২ লাখ ৬১ হাজার ১৯৮টি। অর্থাৎ ৯ মাসের ব্যবধানে পুরুষ বিও হিসাব কমেছে ১৯ হাজার ৭২২টি।
আলোচ্য ৯ মাসে নারী বিও হিসাব সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার ৭৩৫টি। গত ডিসেম্বর শেষে নারী বিও হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৫৫টি। গত সেপ্টেম্বর শেষে এটি কমে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২০টি হয়েছে।
আলোচ্য সময়ে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিও হিসাব কমেছে ২ হাজার ৮৯০টি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা কমে হয়েছে ৪৩ হাজার ৮০১টি। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এ সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৬৯১টি।