খুলনা: খুলনায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী তৎপরতা জোরদার করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃত্ব ইতিমধ্যে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করছেন, যদিও বেশিরভাগ প্রার্থীই নির্বাচনী মাঠে নতুন মুখ।
তবে বয়সে তরুণ হলেও তাদের উদ্যম, সাংগঠনিক দক্ষতা ও স্থানীয় উন্নয়নে ভূমিকা তাদেরকে সম্ভাবনাময় প্রার্থীতে পরিণত করবে বলে আশাবাদী দলটির কর্মী-সমর্থকরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে খুলনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রায় এক ডজন এনসিপির নেতা। তারা নিজ নিজ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাপাপাশি কেন্দ্রেও চালাচ্ছেন জোর লবিং।
খুলনা-১ আসনে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক ওয়াহিদুজ্জামান ইতিমধ্যেই দাকোপ ও বটিয়াঘাটা অঞ্চলে নিজের কার্যক্রম দৃশ্যমান করেছেন। মসজিদ, মাদরাসা ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে তার ভূমিকা স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি দুর্গাপূজায় তিনি বিভিন্ন এলাকার শতাধিক মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। এছাড়া এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলের যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু ও বটিয়াঘাটা উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী এ্যাড. প্রশান্ত কুমার হালদার। তিনি জাতীয় পার্টির খুলনা জেলা শাখার সাবেক আইন সম্পাদক।
খুলনা-২ আসনে দলটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল হক নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এনসিপির এই কেন্দ্রীয় নেতা। তবে এই আসনে এখন পর্যন্ত তিনিই একক মনোনয়ন প্রত্যাশী।
খুলনা-৩ আসনে এনসিপির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন এস এম আরিফুর রহমান মিঠু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে তার। নির্বাচনী এলাকা খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানা এলাকায় নিজস্ব একটি শক্ত বলয় রয়েছে সাবেক এই বিএনপি নেতার। দলের ইফতার পার্টি, শ্রমিক সমাবেশ, পদযাত্রাসহ প্রায় সকল কর্মসূচিতেই তার সরব উপস্থিতি ছিল। তাছাড়া তার দানের জমিতে খুলনা জেলা ও মহানগর এনসিপির কার্যালয় গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
খুলনা-৪ আসনে এনসিপির হয়ে লড়াই করতে পারেন জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফয়জুল্লাহ। তাছাড়া আলোচনায় রয়েছেন জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা মোল্লা শওকাত হোসেন বাবুল ও জেলা এনসিপির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম। এছাড়া সাবেক এক বিএনপি নেতাও এই আসনে দলটির হয়ে লড়াই করতে পারেন বলে জানা গেছে।
খুলনা-৫ আসনে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহবায়ক তানজিল মাহমুদ এনসিপির হয়ে লড়তে পারেন। তার নির্বাচনী এলাকা ফুলতলা ও ডুমুরিয়ায় তিনি ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়েছেন। বিভিন্ন উৎসবে তার ব্যানার-ফেস্টুন দৃশ্যমান হচ্ছে। তাছাড়া স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। এ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাড. মাসূদূর রহমানও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।
খুলনা-৬ আসনে এনসিপির হয়ে লড়াই করতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জেলার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি। বাপ্পির গ্রামের বাড়ি পাইকগাছা উপজেলায়। তাছাড়া দীর্ঘদিন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুবাদে কয়রা-পাইকগাছা অঞ্চলে তার আলাদা সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। চলমান দুর্গাপূজায়ও তিনি পাইকগাছা-কয়রা অঞ্চলের বিভিন্ন মন্দিরে উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছেন। এরআগে গত বছর পাইকগাছায় বন্যাদুর্গতদের মাঝেও তিনি বিশাল ত্রাণের বহর পাঠিয়ে দুই সপ্তাহে ধরে বিলিয়েছিলেন। পর্যটনকেন্দ্র স্থাপন, আন্তর্জাতিক নৌরুট চালু ও ডকইয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছেন। তিনি নিয়মিত এলাকায় যাওয়া আসা রাখছেন ও নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। খুলনার এনসিপির রাজনীতিতে তরুনপ্রজন্মের মধ্যে বাপ্পির আলাদা জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে।
এছাড়া এই আসনে বৈষম্যবিরোধীর আরেক নেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বলও মনোনয়ন চাইতে পারেন। সদ্য শেষ হওয়া জাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি।
তাছাড়া এ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন এনসিপি খুলনা জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক এ্যাড. মাফতুন আহমেদ। খুলনায় এনসিপির এই তৎপরতা নির্বাচনী মাঠে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যদিও দলটি নতুন, কিন্তু তরুণ ও গতিশীল নেতৃত্ব নিয়ে তারা আসন্ন নির্বাচনে চমক দেখাতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।