চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিক্ষোভ করেছেন বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের একদল কর্মকর্তা। এদের মধ্যে সম্প্রতি চাকরিচ্যুতদের পাশাপাশি কর্মস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে নিস্ক্রিয় করে রাখা (ওএসডি) হয়রানির শিকার কর্মকর্তারাও ছিলেন। অবরোধের কারণে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে উপজেলার ফৌজদারহাটে কয়েক’শ ব্যাংককর্মী অবস্থান মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখানে পুলিশ থাকলেও তাদের নীরব থাকতে দেখা গেছে।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, অবৈধ আদেশ-মানি না মানবো না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ছবি: সারাবাংলা
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চাকরিচ্যুত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আরিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা দিয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব ধরনের নিয়ম অনুসরণ করে, ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব সব নিয়ম-কানুন মেনে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। অথচ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে আমাদের ওপর জুলুম শুরু করেছে। বিশেষত. চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের আবারও বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার নামে তারা চাকরিচ্যুত করার ফাঁদ পেতেছে। এই ফাঁদে আমরা পা দিইনি।’
‘এরপর থেকে আমাদের বিনা নোটিশে অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। হাজার, হাজার কর্মীকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে আমাদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে। আমাদের অ্যাকাউন্টে থাকা বেতনের টাকাও আমরা তুলতে পারছি না। আমাদের যাদের বেতনটুকুই একমাত্র ভরসা ছিল, আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।’
আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর চট্টগ্রামের কর্মীদের তালিকা করে চাকরিচ্যুত করছে। আমরা এ অন্যায় মেনে নিতে পারি না। বাধ্য হয়ে আমরা আজ রাস্তায় নেমেছি। সারা দেশের সব শাখা থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামের অধিবাসী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।’
চাকরিচ্যুত কর্মীদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া, ওএসডি কর্মকর্তাদের তাদের দায়িত্ব পালনে হয়রানি বন্ধসহ ছয় দফা দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে, প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে মহাসড়ক ছেড়ে যান ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তাদের অবরোধের কারণে দেশের ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। মহাসড়কের উভয় পাশে ১০ কিলোমিটার তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। আটকে পড়ে শত, শত যানবাহন। শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। অনেককে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে অবরোধস্থল পার হতে দেখা গেছে। পণ্যবোঝাই যানবাহনগুলো ঠাঁই রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল।

ছবি: সারাবাংলা
হাইওয়ে পুলিশের সীতাকুণ্ডের বার আউলিয়া ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুল মোমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ১১টা থেকে মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু হয়। কয়েক’শ লোক মহাসড়কে অবস্থানের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের দাবির বিষয় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেওয়ার পর তারা চলে গেছেন।’
উল্লেখ্য, দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ, যেটি আগে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে।
এস আলমের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির টাকা লুটপাটের পাশাপাশি নিজ এলাকা পটিয়াসহ চট্টগ্রামের লোকদের গণহারে নিয়োগের অভিযোগ ছিল।
নতুন পর্ষদ আসার পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়।
এ পরীক্ষার মাধ্যমে এস আলমের আমলে নিয়োগ পাওয়া চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতির ফাঁদ পাতার অভিযোগ তুলে তারা পরীক্ষা বর্জন করেন। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর কর্মস্থলে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন তারা

ছবি: সারাবাংলা
এ অবস্থায় পরীক্ষা বর্জন করা শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকিদের কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় করে রেখে হয়রানির মাধ্যমে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন, সড়কে বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকটিতে ‘হয়রানির শিকার’ কর্মকর্তারা। এরপর শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে কর্মস্থলে নিস্ক্রিয় করে রাখা কর্মকর্তারা রোববার (৫ অক্টোবর) থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।