Saturday 04 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনে শান্তির দুয়ার খুলছে, নাকি জটিলতার সূচনা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৪ অক্টোবর ২০২৫ ২২:০০ | আপডেট: ৪ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪৭

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় দুই বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। ৩ অক্টোবর এক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি জানায়, তারা গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি— তবে তা হতে হবে শর্তসাপেক্ষে। অন্যদিকে, ট্রাম্প এটিকে ‘বড় জয়’ আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলকে অবিলম্বে বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, অবশেষে কি শেষ হতে যাচ্ছে যুদ্ধ, নাকি সামনে আরও জটিলতা অপেক্ষা করছে?

হামাসের অবস্থান

হামাস বলেছে, তারা গাজায় আটক থাকা সব ইসরায়েলি বন্দিকে (জীবিত ও মৃত) মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে এর বিনিময়ে গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ও সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহার চায়। একইসঙ্গে তারা জানিয়েছে, গাজার শাসনভার একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটিক সংস্থার হাতে তুলে দিতে তারা রাজি। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবের কিছু ধারা, বিশেষ করে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ধারণা তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাসের যুক্তি, ‘ফিলিস্তিন শাসন করবে কেবল ফিলিস্তিনিরাই।’

বিজ্ঞাপন

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

এদিকে ট্রাম্প হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন। নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ফিলিস্তিনি এই সংগঠন স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।’ তিনি আরও ঘোষণা দেন, ‘ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে, যাতে বন্দিদের মুক্তি দেওয়া যায়।’ ট্রাম্প লিখেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করছি। এটি শুধু গাজার ব্যাপার নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপার।’

পরে এক ভিডিও বার্তায় তিনি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ‘বড় জয়’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আজ একটি বড় দিন। আমরা দেখতে চাই, কীভাবে সবকিছু শেষ হয়। সবাই শান্তি চায়, সবাই চায় যুদ্ধ থামুক, আর আমরা সেই লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি।’

ইসরায়েলের দ্বিধা

ট্রাম্প সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথভাবে এই শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তখন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেন। কারণ, এর মাধ্যমে ইসরায়েলের যুদ্ধলক্ষ্য পূর্ণ হবে। ‘এটি আমাদের সকল বন্দিকে ফিরিয়ে আনবে, হামাসের সামরিক ক্ষমতা ও রাজনৈতিক শাসন ভেঙে দেবে এবং গাজা আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি হবে না’- বলেন নেতানিয়াহু। তবে তিনি সতর্ক করেন, যদি হামাস পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে তা ভেস্তে দিতে চায়, তাহলে ইসরায়েল একাই ‘কাজ শেষ করবে’। নেতানিয়াহু পরে দেশে ফিরে বলেন, ‘তিনি কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নেননি এবং গাজায় সেনা অবস্থান অব্যাহত থাকবে।’

ইসরায়েল কি সত্যিই বোমা হামলা বন্ধ করবে?

হামাস পুরো প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় ট্রাম্পের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল সন্তুষ্ট নয়। অ্যাক্সিওস সাংবাদিক বারাক রাভিদ জানান, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়ায় ‘আশ্চর্য’ হয়েছেন এবং হামাসের উত্তরকে তিনি ‘প্রত্যাখ্যান’ হিসেবে দেখছেন। ইসরায়েলি সরকার বর্তমানে কট্টর ডানপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যারা হুমকি দিয়েছে যে, তাদের অপছন্দনীয় কোনো সমঝোতায় গেলে নেতানিয়াহুকে তারা ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবে। অন্যদিকে বিরোধীরা সমর্থন দিলেও নেতানিয়াহুর সঙ্গে আস্থার সংকটের কারণে ঐক্যবদ্ধ হওয়া কঠিন।

মূল জটিলতাগুলো কী

হামাস স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা প্রস্তাবের কয়েকটি দিক মানতে রাজি নয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো—ট্রাম্প ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসন। হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা কখনোই কোনো অ-ফিলিস্তিনিকে ফিলিস্তিন শাসন করতে দেব না। টনি ব্লেয়ারের নিয়োগ বিশেষভাবে অগ্রহণযোগ্য। কারণ, তিনি ইরাক আক্রমণে যুক্ত ছিলেন।’ এছাড়া, নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টিও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু দাবি করছেন, হামাসকে অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। কিন্তু হামাস বলেছে, তারা কেবল বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে রাজি।

গাজার মাটিতে বাস্তবতা

যদিও ট্রাম্প বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু ইসরায়েল তা মানেনি। গাজা সিটিতে বিমান হামলায় একদিনেই অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছে বলে চিকিৎসা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার পরও মধ্যরাতে উপত্যকাটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় গাজাজুড়ে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। ফলে ময়দানি বাস্তবতা এখনো রক্তাক্ত।

শান্তির সম্ভাবনা, নাকি আরও সংঘাত?

ট্রাম্পের প্রস্তাবে হামাস আংশিক ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিলেও ইসরায়েলের সন্দেহ, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং অতীত অভিজ্ঞতা পুরো প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিশ্লেষকদের মতে, সবকিছু নির্ভর করছে ট্রাম্প কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারেন এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেন তার ওপর। একদিকে, দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তির সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। অন্যদিকে, জটিল বাস্তবতা ও আস্থার সংকট এই শান্তির স্বপ্নকে অধরা করে তুলতে পারে।

সারাবাংলা/এসএস/পিটিএম

খুলছে গাঁজা জটিলতা ট্রাম্প দুয়ার পদক্ষেপ প্রস্তাব শান্তি সূচনা হামাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর