গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া শান্তি প্রস্তাবে হামাস ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে মনে করা হচ্ছে, গাজায় ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী অভিযানের অবসান আসন্ন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে হামাস জানায়, তারা অবশিষ্ট সব বন্দি মুক্তি দিতে এবং ক্ষমতা অন্য ফিলিস্তিনি পক্ষের কাছে হস্তান্তরে প্রস্তুত। তবে প্রস্তাবের কিছু ধাপ নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। হামাসের প্রতিক্রিয়া জানানোর পর এ নিয়ে বিভিন্ন দেশ তাদের মত জানাচ্ছে।
ভারত
ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, জিম্মি মুক্তির ইঙ্গিত একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ভারত একটি টেকসই ও ন্যায়সংগত শান্তির লক্ষ্যে সব প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে যাবে।
পাকিস্তান
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের ইতিবাচক সাড়াকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, এখনই যুদ্ধবিরতি হতে হবে, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা প্রবাহে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। ইসরায়েলকে অবশ্যই তার হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি, তারা একটি স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যেন আমরা জিম্মিদের নিরাপদে দ্রুত বের করে আনতে পারি।
ইসরায়েল
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, হামাসের প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রস্তাবের লক্ষ্য সব জিম্মিকে মুক্ত করা। আমরা প্রেসিডেন্ট ও তাঁর টিমের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাব।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাসের সাড়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এখন জরুরি হলো—“অবিলম্বে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, সব বন্দি মুক্তি, জাতিসংঘের মাধ্যমে দ্রুত ত্রাণ সরবরাহ, বাস্তুচ্যুতি ও দখল ঠেকানো এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু।” তিনি আরও জোর দেন, গাজা উপত্যকার সার্বভৌমত্ব ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের এবং পশ্চিম তীর ও গাজার প্রশাসনকে ঐক্যবদ্ধ কাঠামোর অধীনে আনতে হবে।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ
সংগঠনটি বলেছে, হামাসের ঘোষণায় অন্য ফিলিস্তিনি দলগুলোর অবস্থানও প্রতিফলিত হয়েছে।
কাতার
কাতার বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের সম্মতির বিষয়টিকে তারা স্বাগত জানায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি আরও জানান, তারা ট্রাম্পের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানকেও সমর্থন করে।
মিসর
মিসর জানিয়েছে, তারা আশা করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এই ইতিবাচক অগ্রগতি সব পক্ষকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে উৎসাহিত করবে।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামাসের দেওয়া বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। হামাস জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে এমনটি জানান।
ফ্রান্স
এক্স হ্যান্ডলে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ লেখেন, সব জিম্মির মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতি এখন নাগালের মধ্যে। হামাসের প্রতিক্রিয়ায় আশাবাদী অন্য ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও তিনি সুর মিলিয়েছেন।
জার্মানি
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, এই পরিকল্পনা সংঘাতের মধ্যে শান্তি ফেরানোর সেরা সুযোগ। জার্মানি ট্রাম্পের প্রস্তাবকে পুরোপুরি সমর্থন করে।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে বলেছেন, এটি বড় অগ্রগতি। তিনি দুপক্ষকেই বিলম্ব না করে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর এই প্রতিক্রিয়া গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে।
জর্ডান
জর্ডান একে “গাজা যুদ্ধ শেষের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ” বলে অভিহিত করেছে এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ ও সীমান্ত উন্মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
মালয়েশিয়া
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “পরিকল্পনাটি নিখুঁত নয়, অনেক বিষয়ে আমরা দ্বিমত পোষণ করি। তবে এখন প্রধান অগ্রাধিকার ফিলিস্তিনি জনগণের জীবন বাঁচানো।”
স্পেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে লুইস আলবারেস সতর্ক করে বলেছেন, “অনেক বাধা এখনো আছে। হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানও থামাতে হবে।”
আয়ারল্যান্ড
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, “এই মুহূর্তে সকলের উচিত যুদ্ধ থামানো, বোমা বন্ধ করা এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহিত হতে দেওয়া।”
কানাডা
প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি বলেছেন, হামাসের ক্ষমতা ছাড়ার প্রতিশ্রুতি এবং বন্দি মুক্তির প্রস্তুতিকে কানাডা স্বাগত জানায়। দেশটি সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি পশ্চিমা দেশের মধ্যে একটি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লায়েন বলেছেন, “এটি উৎসাহজনক। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তি এখন নাগালের মধ্যে।”