Sunday 05 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেসব কারণে এ বছর ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫০ | আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও তিনি নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে দাবি করে আসছেন এবং একাধিকবার মনোনয়ন পেয়েছেন। নরওয়ের নোবেল কমিটি সাধারণত এমন ব্যক্তি বা সংস্থাকে অগ্রাধিকার দেয় যারা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে।

ট্রাম্প বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন যে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কর্পস ঘাঁটি কোয়ান্টিকোতে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছি, এখন হয়তো অষ্টমটাও শেষ করতে যাচ্ছি। কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাব? একদমই না। ওরা দেবে এমন কাউকে, যে কিছুই করেনি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রস্তাবিত নতুন শান্তি পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন, যা গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে বলে দাবি করেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে না, বরং অনেক সময় তা নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। অসলোভিত্তিক পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রেগার এ বিষয়ে বলেন, ‘ট্রাম্পের বক্তব্য ও রাজনৈতিক অবস্থান শান্তির পথে নয়। তার ভাষণ এবং নীতি অনেক সময় সংঘাত উসকে দেয়। তাই তার পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করে নরওয়ের নোবেল কমিটি, যা পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত এবং নরওয়ের সংসদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। কমিটি এই সিদ্ধান্ত ম্পূর্ণ গোপন বৈঠকে নেয়। তারা সাধারণত এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয় যারা দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মানবতার সেবায় ভূমিকা রাখে। অল্পসময়ের রাজনৈতিক সাফল্য বা আলোচিত চুক্তি (যেমন এককালীন অস্ত্রবিরতি) সাধারণত পুরস্কারের জন্য যথেষ্ট নয়।

এ বছর নোবেল কমিটি ঘোষণামতে, ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য ৩৩৮ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি সংস্থা রয়েছে।

লন্ডনের হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির সদস্য ইতিহাসবিদ ও গবেষক থিও জেনু বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাত্ক্ষণিক রাজনৈতিক চুক্তি নয়, বরং স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। ট্রাম্পের উদ্যোগগুলো এখনো সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নোবেল কমিটি সাধারণত এমন নেতাকে পুরস্কৃত করে যারা সেতুবন্ধন তৈরি করেন, আন্তর্জাতিক ঐক্য ও পুনর্মিলনের বার্তা দেন। এই গুণগুলো ট্রাম্পের সাথে খুব একটা মেলে না।’

২০১৮ সাল থেকে ট্রাম্পকে একাধিকবার নোবেলের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ক্লডিয়া টেনি তাকে মনোনীত করেন ২০২০ সালের ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ চুক্তির জন্য, যা ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওই চুক্তিগুলো ছিল তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সাফল্য, যা এখনো স্থায়ী শান্তির প্রতিফলন নয়।

এছাড়া, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকেও শান্তিতে নোবেলের জন্য ট্রাম্পের নাম পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ফেব্রুয়ারির ১ তারিখের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তা ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য বৈধ নয়।

অন্যদিকে, নোবেল পুরস্কারের তিনটি বিভাগ (রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ও অর্থনীতি) প্রদানকারী রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অ্যাকাডেমির সহ-সভাপতি ইলভা এঙ্গস্ট্রোম বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণায় স্বাধীনতা গণতন্ত্রের স্তম্ভ। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।’ তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতিকে তিনি অবিবেচিত বলে মনে করেন, যা বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উচ্চশিক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

উল্লেখ্য, নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হবে সোমবার (৬ অক্টোবর) চিকিৎসা শাখা দিয়ে, এরপর পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য এবং শুক্রবার (১০ অক্টোবর) শান্তি পুরস্কার। অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার ঘোষণা করা হবে আগামী ১৩ অক্টোবর।

সারাবাংলা/এনজে

ট্রাম্প নোবেল

বিজ্ঞাপন

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস
৫ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর