Monday 06 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিস্তায় বিপৎসীমার ওপরে পানি: নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচর প্লাবিত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৫৬ | আপডেট: ৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪৪

তিস্তা নদী। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার (৫ অক্টোবর) রাত ১০টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা এ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। রাত ১২টায় এটি ৩৬ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়। ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচর প্লাবিত হয়েছে। অনেকে গবাদিপশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টি এবং গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বেড়েছে। রোববার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে ছিল, বিকেল ৩টায় ১ সেন্টিমিটার নিচে, কিন্তু সন্ধ্যার পর দ্রুত বেড়ে রাত ১০টায় বিপদসীমা ছাড়ায়। সোমবার পর্যন্ত উজানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গঙ্গাচড়ার লক্ষীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় লক্ষীটারী, কোলকোন্দ ও নোহালী ইউনিয়নের ১২টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত। শংকরদহ, ইচলী, জয়রাম ওঝাসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকেছে। মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে এবং উদ্ধারের জন্য নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, ৪ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৫ অক্টোবর বিকেল ৩টা পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে পানি ৬৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ভারতের দোমহনীতে ১৫৮ সেন্টিমিটার এবং গজলডোবায় ২২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুটানের ওয়াংচু নদীর পানি তালা ড্যামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ধরলা ও দুধকুমার নদীতেও পানি বাড়ছে।

এদিকে, ডালিয়া ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলেও পানি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। ফ্লাড বাইপাসের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, যা যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে। তিস্তা অববাহিকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মধ্যরাত থেকে বাসাবাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিংয়ে ২৬১ মিলিমিটার, কোচবিহারে ১৯০ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ১৭২ মিলিমিটার এবং বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। হাজার হাজার হেক্টর আমন ও সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেট সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করছে এবং নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুল হাসান মৃধা জানান, পানিবন্দীদের সরানো হয়েছে এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, তিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে, তবে খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের’ সাধারণ সম্পাদক সাফিয়া রহমান এবং ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে অববাহিকার দুই কোটি মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। তারা নভেম্বরের মধ্যে এই পরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, পাঁচ জেলার প্রশাসন মাইকিং করে সতর্ক করছে এবং মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।

সারাবাংলা/এসডব্লিউ

চর তিস্তা নদী দ্বীপচর প্লাবিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত