ঢাকা: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ-এ এস আলম গ্রুপের ‘অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী’দের অপসারণের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারস ফোরামের উদ্যোগে মানববন্ধন হয়। একইসঙ্গে দেশের প্রতিটি শাখা কার্যালয়ের সামনে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরামের ব্যানারে একই দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দেন মো. মোহতাছিম বিল্লাহ, হাফিজুর রহমান, ইমাম হোসাইন, মাহমুদুল হাসান, এ টি এম সিরাজুল হক, হারুনুর রশিদ, মো. মুস্তাফিজুর রহমান, মো. রতনসহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এস আলমের মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ করতে হবে।’ বৃহস্পতিবারের (৯ অক্টোবর) মধ্যে পদক্ষেপ না নিলে শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এ সময় ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম, সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম, ইসলামী ব্যাংক প্রাক্তন ব্যাংকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী চাকরিপ্রত্যাশী পরিষদ, সচেতন পেশাজীবী গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক সিবিএ এবং সচেতন ব্যাংকার সমাজ একই দাবিতে মানববন্ধনে যোগ দেয়।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ রাষ্ট্রীয় প্রভাব ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয় এবং বৈধ মালিক ও বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিতাড়ন করে। পরে ব্যাংকের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে গোপনে চট্টগ্রাম, বিশেষ করে পটিয়া উপজেলার হাজারো অযোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দিয়ে ব্যাংকের কর্মপরিবেশ ধ্বংস করে।’
বক্তাদের দাবি, ব্যাংকের এ অবৈধ নিয়োগে প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি অপচয় হচ্ছে। ব্যাংক এসব নিয়োগপ্রাপ্তকে দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পাঁচ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ৪১৪ জন পরীক্ষা দিয়েছেন, বাকিরা পরীক্ষায় অংশ নেননি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এরপর পরীক্ষায় অনুপস্থিত প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি এবং ৪০০ জন বিদ্রোহী কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ‘অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণ মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং দেশের সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায্য অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ৬৩ জেলার মানুষকে বঞ্চিত করে কেবল পটিয়া ও চট্টগ্রামের লোকজনকে গোপনে চাকরি দেওয়াই আসল মানবাধিকার লঙ্ঘন ছিল।’
বক্তারা জানান, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে সাত হাজার ২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজারই পটিয়া উপজেলার। এ ছাড়া এস আলমের নির্দেশে ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংকের একাধিক প্রাক্তন কর্মচারী অভিযোগ করেন, তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ না হলেও পদত্যাগ বাধ্য করা হয়েছে। নূরুল হক নামের এক গাড়িচালক বলেন, ‘এইচআর বিভাগের প্রতিনিধি আমাকে বলেন, পদত্যাগপত্র না দিলে সার্ভিস বেনিফিট পাবেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমি পদত্যাগ করি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক নির্বাহী জানান, ভুয়া বিনিয়োগের ফাইলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার ও চাকরিচ্যুত করা হয়।
বক্তারা ঘোষণা দেন, ইসলামী ব্যাংককে মাফিয়া চক্রের কবল থেকে রক্ষায় তারা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। তারা অবৈধ নিয়োগ বাতিল এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন নিয়োগের দাবি জানান।