Monday 06 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আগ্রাসী রূপে তিস্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পাড়ের বাসিন্দারা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৪২ | আপডেট: ৬ অক্টোবর ২০২৫ ২০:১০

পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন পানিবন্দী মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি রোববার (৫ অক্টোবর) বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫ সেন্টিমিটার) প্রায় ২০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে এসেছে। ফলে, প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কিন্তু, এতে স্বস্তি ফেরেনি সাধারণ মানুষের মধ্যে। তীব্র স্রোত নিয়ে তিস্তা আগ্রাসী রূপ ধারণ করায় ভাঙ্গন আতঙ্কসহ নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছেন এই নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, সোমবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে তা বিপৎসীমার (৫২.১৫ সেন্টিমিটার) প্রায় ২০ সেন্টিমিটার নিচে পানি নেমে এসেছে। গত দুই দিনে এলাকায় গড়ে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, ৭টায় ১২ সেন্টিমিটার এবং ৮টায় ২০ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। ফলে, পাউবো রেড অ্যালার্ট জারি করে। বন্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খোলা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটের তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। এসব এলাকার হাজার হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, আমন ধান, সবজি ক্ষেত ও পুকুর তলিয়ে গেছে। অনেকে গবাদিপশু নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

গঙ্গাচড়া এলাকার তিস্তা নদী সংলগ্ন লক্ষীটারী এলাকার বাসিন্দা আফজাল মিয়া বলেন, ‘রোববার সন্ধ্যা থেকে পানি ঢুকতে শুরু করে, রাতে বুকসমান পানি উঠে। গরু-ছাগল নিয়ে উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

গঙ্গাচড়ার লক্ষীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় লক্ষীটারী, কোলকোন্দ ও নোহালী ইউনিয়নের ১২টি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শংকরদহ, ইচলী, জয়রাম ওঝাসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকেছে। মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে এবং উদ্ধারের জন্য নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, পাকা সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ এবং রাস্তা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। তীরবর্তী এলাকাবাসীকে সতর্ক করে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন পানিবন্দী মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টি এবং গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি বেড়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিংয়ে ২৬১ মিলিমিটার, কোচবিহারে ১৯০ মিলিমিটার, জলপাইগুড়িতে ১৭২ মিলিমিটার এবং বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, তিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে, তবে খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাফিয়া রহমান এবং তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন-এর প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে অববাহিকার দুই কোটি মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। নভেম্বরের মধ্যে এই পরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন তারা।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, পাঁচ জেলার প্রশাসন মাইকিং করে সতর্ক করছে এবং মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।

সারাবাংলা/জিজি

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তিস্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর