সিলেট: নগরীর ঐতিহ্যবাহী ধোপাদিঘিতে হঠাৎ করেই হাজারো মাছ মরে ভেসে উঠেছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে দিঘির পানিতে ভাসতে দেখা যায় মরা মাছের স্তূপ। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ অসহ্য হয়ে উঠেছে, বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। তবে এত মাছ কীভাবে মারা গেল—বিষক্রিয়া, দূষণ না অন্য কোনো কারণ—তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও গুঞ্জন।
বাসিন্দারা জানান, সকাল থেকেই সিলেট নগরের পুরাতন কারাগার সংলগ্ন ধোপাদিঘির জলে শত শত মরা মাছ ভেসে উঠে। এতে দিঘির পানি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি ইজারাদার কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনকে অবহিত করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পচে যাওয়া মাছগুলো নৌকাযোগে তীরে আনা হচ্ছে এবং অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পানিতে এখনো ভেসে আছে অনেক মাছ। এ কারনে দিঘির চারপাশে দুর্গন্ধে হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ছয় একর আয়তনের ধোপাদিঘি সিলেট নগরের অন্যতম বড় জলাশয়। এর মধ্যে পাঁচ একর এলাকা সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এবং অবশিষ্ট অংশ ধোপা সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দীর্ঘদিন বেদখলে পড়ে থাকা এই দিঘি উদ্ধার করে সৌন্দর্যবর্ধন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণে ২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সিটি করপোরেশন। ২০২২ সালের ১১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকেই এটি নগরবাসীর জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়।
পরবর্তীতে দিঘিটি মেসার্স ঈশান এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া হয়। প্রবেশমূল্য ৫ টাকা এবং পার্কিং ফি ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ইজারাদার ওয়াকওয়ের ভেতরে কয়েকটি ছোট খাবারের দোকানও বসান।
ইজারাদার কর্তৃপক্ষের একজন কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, “দিঘিতে কোনো বিষ প্রয়োগ করা হয়নি। নতুন মাছ ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল। সে সময় জাল ফেলা হয়েছিল, সম্ভবত জালের আঘাতেই মাছগুলো মারা গেছে।”
তবে স্থানীয়দের অনেকে বিষয়টি বিশ্বাস করছেন না। তাদের ধারণা, কেউ হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে পানিতে বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়েছে। এলাকাবাসীর একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, “এভাবে একসঙ্গে এত মাছ মারা যাওয়া স্বাভাবিক নয়। নিশ্চয়ই কেউ ক্ষতি করার জন্য পানি দূষিত করেছে।”
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘আমরা ইজারা দিয়েছি, মাছ ইজারাদার ছেড়েছেন। আমি ঢাকায় অবস্থান করছি, তবে বিষয়টি জানার পরই স্থানীয় কর্মকর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।’
সিসিকের সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘পুকুরটি গত বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে, শর্ত ছিল মাছ ছাড়বে ও তুলবে। এখন এত মাছ কীভাবে মারা গেল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, যদি এগুলো কেউ খাওয়ার জন্য নিয়ে যায় এবং বিষক্রিয়া থাকে, তাহলে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি হবে।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, শহরের জলাশয়ে এভাবে মাছ মারা যাওয়ার পেছনে সাধারণত তিনটি কারণ থাকতে পারে— পানির রাসায়নিক দূষণ বা বিষক্রিয়া, পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি অথবা অতিরিক্ত মাছ চাষ বা জাল ফেলার কারণে পানির গুণমান নষ্ট হওয়া। তবে সঠিক কারণ জানতে পানির নমুনা পরীক্ষা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।