ঢাকা: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতে ইসিকেই এগিয়ে আসতে হবে। এখন থেকেই প্রশাসনের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে হবে। এআই’র অপপ্রচার রোধসহ ডিজিটাল স্পেস নিরাপদ রাখতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কোনো চাপে নতি স্বীকার করা যাবে না।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সম্পাদকরা এসব পরামর্শ দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বিকেল আড়াইটার দিকে শুরু হওয়া এই সংলাপ চলে প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। সংলাপে দেশের অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকরা অংশ নেন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, বার্তা সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বাসসের এমডি মাহবুব মোর্শেদ, ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক, আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল, আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান, বাংলাবাজারের নির্বাহী সম্পাদক রাশেদুল হক, খবর সংযোগের সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বাংলানিউজের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু, সারাবাংলা ডটনেটের হেড অব নিউজ গোলাম সামদানী, জাগো নিউজের সম্পাদক জিয়াউল হক, ঢাকা মেইলের সম্পাদক হারুন জামিল ও রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) সভাপতি কাজী জেবেল প্রমুখ।
আরও পড়ুন-নির্বাচন একাধিক দিনে করা সম্ভব কিনা তা ভাবতে হবে: গোলাম সামদানী
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সাইবার নজরদারি বাড়াতে হবে। এআই দিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে। আপনাদের সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের সঙ্গেও আপনাদের মত বিনিময় করতে হবে।’
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে। গুজব আছে। অপতথ্যও আছে। আমরা প্রত্যাশা করতে চাই নির্বাচনটা ভালোভাবে হবে। এবারের নির্বাচনে অর্থ ও বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু প্রশাসনের অবস্থান দুর্বল। প্রার্থীরা হলফনামায় সঠিক তথ্য দেয় না। এখানে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব রয়েছে। শুধু এআই নয়, ডিজিটাল স্পেসটা নিরাপদ রাখা বড় দায়িত্ব।’
বাংলাবাজারের নির্বাহী সম্পাদক রাশেদুল হক বলেন, ‘বিগত দিনে এজেন্টদের ধরে নিয়ে গুম করা হয়েছে। এবার তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবেন কিনা তা ভাবতে হবে। ২০১৮ সালের যাদের নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের এই নির্বাচন থেকে দূরে রাখবেন। নির্বাচনের আগের রাতেও ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত। আর ভোটের দিনে সাংবাদিকদের অবাধে নির্বাচন কক্ষে প্রবেশ করতে দিতে হবে।’
আরও পড়ুন-‘বিগত নির্বাচন খারাপ করার ভূমিকায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’
খবর সংযোগের সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এখনই বিলবোর্ড সরিয়ে নিতে হবে।’
আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রার্থী তার হলফনামা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা যেন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। কেন্দ্রের জন্য নানা ধরনের গোপন নির্দেশ থাকে। কমিশনের প্রতি অনুরোধ কোনো গোপন নির্দেশ যাতে না থাকে। অনেকেই জিজ্ঞেস করে ইলেকশন হবে তো। কারণ মানুষের মধ্যে ভীতি রয়েছে। কমিশনকে সেই স্বচ্ছতা আনতে হবে।’
বাংলানিউজের সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যাপারে এই কমিশনের কোনো বাধা নেই। ফ্যাসিস্টের সমর্থকরা এখন বিশাল আছে কিনা তাই সন্দেহ। ভোটটা সুন্দরভাবে হওয়া দরকার। ৪৫ লাখ নতুন ভোটার হয়েছে, আরও কতো বাকি রয়েছে তা ভেবে দেখবেন।’
আরও পড়ুন-২১ লাখ মৃত ভোটার চিহ্নিত, যারা আগে ভোট দিতেন: সিইসি
জাগো নিউজের সম্পাদক জিয়াউল হক বলেন, ‘সীমানা জটিলতা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের আরও অবাধ যাতায়ত নিশ্চিত করতে হবে। ভোট এখনো উৎসবমুখর হওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি।’
আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন করতে ইসিকেই এগিয়ে আসতে হবে। গত তিন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এবার ভোট উৎসবমুখর হবে।’
সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বিষয়ে কথাবার্তা আছে। এই আস্থা অর্জনটা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বিবেচনায় একাধিক দিনে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যাদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই দল নির্বাচনের দিন হয়তো বসে থাকবে না। ইসিকে অবশ্যই বিতর্কের বাইরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।’
নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী বলেন, ‘প্রশাসনের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আবহ তৈরি করতে হবে। গণভোটের বিষয়ে কাজ করতে হবে। ঋণ খেলাপী ও কর খেলাপীরা যাতে প্রার্থী হতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সফল নির্বাচিন করতে আস্থা অর্জন জরুরি।’
খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যদি অন্তর্ভূক্তিমূলক না হয় তাহলে জাতি বিভাজনের দিকে যাবে। আমরা মব সন্ত্রাস দেখেছি। ভয়ে এখন অসংখ্য মানুষ বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
সংলাপে জাতীয় নির্বাচন একাধিক দিনে করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সারাবাংলা ডটনেটের হেড অব নিউজ গোলাম সামদানী। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার না করার পরামর্শও দেন তিনি। আর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনকে আরও বেশি ক্ষমতা প্রয়োগের পরামর্শও দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘এই নির্বাচনটি ভবিষ্যত বাংলাদেশের পথ নির্দেশ করে দেবে। এই নির্বাচন ভালো না হওয়া ছাড়া আমাদের কাছে কোনো অপশন নেই। জাতির জন্যেই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। ফেস্টিভ মুডে হতে হবে ইলেকশন। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করা জাতীয় দায়িত্ব। সেখানে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন ও নির্বাচন সুষ্ঠু করা সবার দায়িত্ব।’