Monday 06 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফানুসের রঙে রঙিন পাহাড়ের আকাশ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৪৭

আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে ফানুস উড়িয় হয়।

বান্দরবান: জাগতিক দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের আশায় রাজ্য-রাজত্ব, ভোগ-বিলাস সব ছেড়ে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে সংসার পরিত্যাগ করেছিলেন রাজকুমার সিদ্ধার্থ। দীর্ঘ তপস্যায় একসময় তিনি হয়ে ওঠেন গৌতম বুদ্ধ। প্রচলিত আছে, গৌতম এই পূর্ণিমাতেই নিজের মাথার চুল উড়িয়ে দিয়েছিলেন আকাশে। সে চুল অবশ্য ফিরে আসেনি, হীরা-মানিক্যখচিত স্বর্ণপাত্রে সংরক্ষিত হয়ে স্থাপন হয় চুলামনি চৈত্য, যা দেবতাদের জন্যও পূজনীয়।

বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের সন্ন্যাস গ্রহণ করায় চুল আকাশে উড়িয়ে দেওয়া তথা জাগতিক সব চিহ্ন থেকে মুক্তির প্রতীকী ঘটনা স্মরণ করেই প্রতি বছর আশ্বিনী পূর্ণিমার তিথিতে আকাশে উড়ানো হয় শত শত ফানুস। বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবই এই ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ বা প্রবারণা পূর্ণিমা।

বিজ্ঞাপন

প্রতি বছর চার দিন ব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে উদ্‌যাপন করা হলেও এ বছর তিনদিন ব্যাপী করা হচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা। রোববার (৫ অক্টোবর) শুরু হওয়া এই আয়োজন চলবে বুধবার (৮ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত।

 

আয়োজনের মধ্যে এবারে গৌতম বুদ্ধের স্মরণে ফানুস উড়ানো হচ্ছে । সোমবার সন্ধ্যায় সেই ফানুস উড়েছে আকাশে। এ সময় মারমা ভাষায় ‘সাও দো’, ‘সাও দো’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চ নু মং মার্মা বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় পুরাতন রাজবাড়ী প্রাঙ্গন থেকে বিহারে পূজার উদ্দেশ্য মঙ্গল রথযাত্রা, সন্ধ্যা ৬টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও চুড়ামণি জাদির উদ্দেশ্যে রং বেরংয়ের ফানুস উড়ানো ও সন্ধ্যা সাতটায় বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় পিঠা তৈরি উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরাতন রাজবাড়ী প্রাঙ্গন থেকে দায়ক-দায়িকা ও সর্বসাধারনের পূজার উদ্দেশ্যে মঙ্গল রথযাত্রা বের হয়ে শহর ও পাড়া প্রদক্ষিণ শেষে সাঙ্গু নদীর উজানীপাড়া খেয়াঘাটে মঙ্গল রথ উৎসর্গ করে এই তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সফল সমাপ্তি হবে।’

মারমা সম্প্রদায় তিন মাস বর্ষাব্রত পালনের পর ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এই উৎসবে অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে দলবদ্ধভাবে রাতব্যাপী পিঠা তৈরি, নতুন পোশাক পড়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের পিঠা বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, হাজার প্রদ্বীপ প্রজ্বালন, আকাশে ফানুস উড়ানো ও রথযাত্রা।

সোমবার সকাল থেকে বান্দরবানের বিহারে বিহারে চলছে ভিক্ষুদের উদ্দেশে অর্থ ও অন্নদান, ফুল পূজা। উপাসক-উপাসিকারা গ্রহণ করছেন অষ্টশীল ও দশশীল। বিহারে বিহারে চলছে ধর্মীয় দেশনা। জগতের সব প্রাণীর মঙ্গল কামনায় করা হচ্ছে বিশেষ প্রার্থনা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন বিহারে বিহারে উপস্থিত হয়ে সুখ-শান্তি লাভ ও পারিবারিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় জড়ো হচ্ছেন। দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধূপকাটি প্রজ্বালন আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং (বিভিন্ন ধরনের খাবার) প্রদান করে দিনটি পালন করেন মহাআনন্দে।

সোমবার বিকেল ৫টায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবের মূল আকর্ষণ পুরাতন রাজবাড়ী মাঠে তৈরি করা মঙ্গলরথ। রথে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে ঐতিহ্যবাহী রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত আসাংম্রাইকে (গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে) বন্দনা করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। পরে সেখানে বন্দনা শেষে উজানী পাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত পদমুং আসাংকে বন্দনা করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়। এর পর পুনরায় পুরাতন রাজবাড়ীতে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠে তৈরি করা রথের ওপর একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে রথটি পুরো শহর ঘোরানো হবে। এ সময় বৌদ্ধ ধর্মের নর-নারীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বুদ্ধ মূর্তিকে। রাতের এ রথযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই পাশে উপচে পড়া ভিড় জমে। মঙ্গলবার রাতে রথটি বড় ক্যাং থেকে উজানি পাড়া প্রদক্ষীণ করে খেয়া ঘাটে রথ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুই দিনব্যাপী প্রবারণা পূর্ণিমা।

এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব বা মাহা. ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবকে কেন্দ্র করে বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার।

তিনি আরও জানান, পুরো বান্দরবান পার্বত্য জেলা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে এবং পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবে।

সারাবাংলা/এইচআই

গৌতম বুদ্ধ ফানুস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর