রংপুর: রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হয়েছে। এক রাতেই লোকালয় থেকে পানি নেমে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও কর্দমাক্ত পরিবেশের কারণে বানভাসীদের দুর্ভোগ শুরু হয়েছে।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাত থেকে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং অবিরাম বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়, যা এ বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়।
গঙ্গাচড়ার নোহালী,কচুয়া, চর ইছলি, জয়রাম ওঝা, কোলকোন্দ ও লক্ষ্মীটারীসহ বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘরে ২-৩ ফুট পানি ঢুকে ফসলি জমি, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। বিশেষ করে গঙ্গাচড়ার ২০টি চরাঞ্চল গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
পানির তীব্র স্রোতে তিস্তা সেতুরক্ষা ক্রস বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল ধরেছে, যা জরুরিভাবে মেরামত না করলে রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাট ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে। কাঁচা-পাকা রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ পানি বেড়ে উঠোনে হাঁটুপানি উঠেছে, বাড়িঘর কর্দমাক্ত। চর ইছলি ও জয়রাম ওঝার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার ও সাহেব আলী বলেন, পানির স্রোতে বাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় তারা মহিপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া, বিশুদ্ধ পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, পানিবন্দীদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে এবং ২০ টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, তিন উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে, তবে খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের’ সাধারণ সম্পাদক সাফিয়া রহমান এবং ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে অববাহিকার দুই কোটি মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। তারা নভেম্বরের মধ্যে এই পরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, পাঁচ জেলার প্রশাসন মাইকিং করে সতর্ক করছে এবং মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।