ঢাকা: চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট-এর অক্টোবর সংস্করণে এমন পূর্বাভাস ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থার বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্য পেম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

-ছবি : সংগৃহীত
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস ব্যক্ত করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মারাত্মক ব্যাঘাত সত্ত্বেও পরবর্তী প্রান্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফিরে এসেছে। বহিরাগত খাতের চাপ হ্রাস, রিজার্ভ স্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, তবে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে- বিনিয়োগে ভাটা, কর্মসংস্থানে ঘাটতি, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংক খাত, উচ্চ খেলাপি ঋণ ও দুর্বল রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য। এছাড় আমদানি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতি হিসাবের ভারসাম্য সামান্য ঘাটতিতে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ব্যবসায় খরচ বেশি হওয়ায় এ দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বেশ কম এবং বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি তীব্রভাবে মন্থর। তবে গত
২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় বিনিয়োগের উন্নতি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, গত কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমলেও এখনো তা অনেক বেশি। গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, দারিদ্র্য বেড়েছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়েছে।
বিদ্যমান এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চারটি বিষয়ে নীতি অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এগুলো হচ্ছে- আরও এবং উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি; বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করা; ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার ও স্থিতিস্থাপকতা তৈরি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের উন্নতি।
এছাড়া ভবিষ্যতে কিছু নীতিগত ক্ষেত্রে ফোকাস করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- প্রথমত: বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের জন্য স্থানিক পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ শক্তিশালী করা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে- স্থানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শক্তিশালী করা; প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ব্যবস্থার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর (যেমন, পরিবহন, সরবরাহ, অর্থনৈতিক অঞ্চল) জন্য মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেক্টরাল মাস্টার প্ল্যান আপডেট করা; কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বাজেট প্রক্রিয়ার একীকরণ ত্বরান্বিত করা; উপজেলা বা উপ-জেলা অফিসগুলোতে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান অংশ অর্পণ করা ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত: নগর স্থানীয় সরকারগুলিকে তাদের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের ক্ষমতায়ন করা। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে- নগর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউএলজিআই) রাজস্ব প্রশাসন উন্নত করতে সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করা; স্থানীয় সরকার বিভাগের এডিপি ব্লক অনুদান বরাদ্দ বাড়ানো; ব্লক অনুদান বরাদ্দের জন্য সূত্র-ভিত্তিক এবং জনসংখ্যা-ভিত্তিক বরাদ্দ ব্যবহার করা; ইউএলজিআইগুলোতে মূল নিযুক্ত কর্মী (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, অর্থ কর্মকর্তা) থাকা নিশ্চিত করা এবং তাদের কাছে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার (যেমন, পরিকল্পনা, ক্রয়) জন্য সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ রয়েছে তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্য পেম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে দৃঢ়তা দেখিয়েছে। টেকসই প্রবৃদ্ধি ও ভালো কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশকে সাহসী সংস্কার ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর করা, জ্বালানি ভর্তুকি কমানো, নগরায়ণ পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে।