ঢাকা: বাংলাদেশে সংস্কারের অংশ হিসেবে গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বরিস একিঞ্চি।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। এদিন সকালে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
বৈঠকে উভয় পক্ষ শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সংহতি, পারস্পরিক আস্থা এবং ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য চলমান সংস্কার উদ্যোগে নিরবিচ্ছিন্ন সমর্থনের প্রতি গভীর প্রশংসা করে তুরস্ক।
এই সময়ে উভয়পক্ষ বাণিজ্য বহুমুখীকরণ, যোগাযোগ উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও যৌথ উদ্যোগ প্রচারের পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা করে এবং যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের অধিবেশন আহ্বানের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়। এ সময় তুরস্কের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়।
এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তুরস্কের সহযোগিতা কামনা করে বাংলাদেশ। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা পর্যালোচনা করে এবং প্রতিরক্ষা শিল্প, ক্রয়, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাড়তে থাকা সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে।
বৈঠকে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। উভয়পক্ষ গ্রিন প্রযুক্তিতে তুরস্কের উন্নত দক্ষতা ব্যবহার করে বাংলাদেশের বহুমুখী ও টেকসই জ্বালানি চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সম্প্রসারণে উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে। গবেষণা ও উদ্ভাবন, কারিগরি প্রশিক্ষণ, তথ্যপ্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করার বিষয়ে মতবিনিময় হয়।
স্বাস্থ্যখাতে তুরস্কের অব্যাহত সহায়তার জন্য বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের সময় আহতদের চিকিৎসা এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে পরিচালিত তুরস্কের ফিল্ড হাসপাতালের কার্যক্রমের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। উভয় পক্ষ স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা জোরদারের উপায় নিয়ে মতবিনিময় করে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তুরস্কের রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানায় বাংলাদেশ।
উভয়পক্ষ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়।
উভয়পক্ষ সুবিধাজনক সময়ে পরবর্তী বৈঠক তুরস্কের আঙ্কারায় আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়। উভয় প্রতিনিধিদল নিশ্চিত করে যে এই বৈঠকের ফলাফল বাংলাদেশ ও তুরস্কের ক্রমবর্ধমান অংশীদারীত্বকে আরও সুদৃঢ় করবে।