ঢাকা: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক ইসি কর্মকর্তারা।
সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের অধীনে দ্রুত নেওয়ার সুপারিশও করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে নির্বাচন কমিশন। এ সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব পরামর্শ জানান। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ইসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. জকরিয়া জানান, মব ভায়োলেন্স, এআই অপব্যবহারের মতো নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসির তৎপরতা, ভোটদানে কম সংখ্যক ভোটার দিয়ে ভোটকেন্দ্র করা, জনসচেতনতার জন্য প্রচারণা, নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি জানান, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা এখন অনেক, তাদেরকে অল্প সময়ের জন্য ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার দিয়ে নিয়োজিত করলে ফলপ্রসু হতে পারে।
ইসির সাবেক যুগ্মসচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনি তদন্ত কমিটির তৎপরতা বাড়ানো, আচরণবিধি যথাযথ প্রতিপালনে বাধ্য করা, নির্বাচন কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার দেওয়া।’ একইসঙ্গে বিধি ভঙ্গ করলে ইসির শক্ত অবস্থান নেওয়া ও দক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের অনুরোধ করেন সাবেক এ কর্মকর্তা।
সাবেক ইসি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জমান তালুকদার জানান, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ইসির সরাসরি নিয়ন্ত্রণসহ সব কাজ সুচারুভাবে করতে পারবেন।
ইসির সাবেক উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অঙ্গীভূত আনসারদের বিষয়ে ‘দলীয়’ অভিযোগ থাকায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। ভোটের দিন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুবিধার্থে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ‘ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার’ দেওয়ার দাবি জানান।
ভোট গণনার ব্যবস্থাপনার স্বার্থে গণমাধ্যমকে কেন্দ্রের বাইরে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোট শেষে গণনার সময় মিডিয়াকর্মীদের কেন্দ্রের ৪০০ গজের ভেতরে যেন কোনোভাবে ঢুকতে না পারে; দৃষ্টি নন্দিত করতে গিয়ে অবস্থা কাহিল হয়। ভোট গণনার সময় অসুবিধা হয়। ভোটার, এজেন্ট কারও কাছে যেন মোবাইল না থাকে। গণমাধ্যমের কাছে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কেউ কথা বলতে পারবে না।’
সাবেক আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, ‘আগামী নির্বাচন জন্য ইসির জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। ইসিকে প্রথমে দলকে কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে হবে। তফসিল ঘোষণার একমাস আগে থেকে আচরণবিধি প্রয়োগ করতে হবে।’
এদিকে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও এয়োদশ জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও ফেমার সভাপতি মুনিরা খান। তিনি বলেন, ‘অন্যথায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
মুনিরা খান আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে কারিশমা দিয়ে, ট্রান্সপারেন্সি দিয়ে, কার্যক্রম দিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন করতে হবে। এ নির্বাচন আপনাদের (ইসি) ওপর নির্ভর করছে।’
এ পর্বের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে যাতে দলীয় লোক না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকবে।’
‘বিতর্কিতদের ‘লোম বাছতে কম্বল উজাড় অবস্থা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত তিনটা নির্বাচনে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের নিয়ে সবাই তো সন্দেহ পোষণ করে। তবে ভালো-খারাপ তো সবখানেই আছে। কিন্তু একদম অনেকে বলছেন, গত তিন নির্বাচনে যারা কাজ করেছেন, তারা যেন ধারে-কাছে না আসতে পারে। এখন ১০ লাখ লোকের (ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা) মধ্যে বাদ দিতে গেলে, কম্বলই উজাড়। লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়-আমার অবস্থা হয়েছে সে রকম।’