খুলনা: জেলা প্রশাসকের সাম্প্রতিক নির্দেশনা/আদেশ শিক্ষিত বেকার সমাজকে নতুনভাবে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে উল্লেখ করে ফ্রিল্যান্সার পরিচালিত পাঠদান কেন্দ্রগুলো নির্বিঘ্নে চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ফ্রিল্যান্সাররা। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় স্কুল/কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একাডেমিক পাঠদান কেন্দ্র (যা প্রচলিতভাবে কোচিং সেন্টার নামে পরিচিত) পরিচালনা করে আসছি। এই উদ্যোগটি একদিকে যেমন তাদের মতো হাজারো শিক্ষিত তরুণের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুলে দিয়েছে, তেমনি অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
“কিন্তু সম্প্রতি জেলা প্রশাসক খুলনা জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন একাডেমিক কোচিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অর্থাৎ বিদ্যালয় চালু থাকাকালীন কোনো কোচিং কার্যক্রম চালানো যাবে না। একইসঙ্গে তিনি সবাইকে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে সতর্ক করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ কোটিং বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশনায় মহামান্য আদালত দেশের সরকারি কিংবা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং করাতে না পারলেও যেসব ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত নন, তারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোচিং করাতে পারবেন বলে মতামত দেন।’
“আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বাইরে যারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত তারা তাদের কার্যক্রম চালু রাখতে পারবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। আদালত বলেন, ‘তবে যারা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত তাদের ক্ষেত্রে সরকারের করা কোচিং বাণিজ্য বন্ধের ২০১২ সালের নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।’ আদালতের এই বক্তব্যের ফলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালের নীতিমালা অনুসারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানে যুক্ত শিক্ষকরা কোনোভাবেই কোচিং করাতে পারবেন না বলে জানান আদালতে উপস্থিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এর তৎকালীন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খুলনা জেলার অভিভাবক হিসেবে খুলনা জেলা প্রশাসকের সাম্প্রতিক নির্দেশনা/আদেশ শিক্ষিত বেকার সমাজকে নতুনভাবে অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে।”
তিনি লিখিত বক্তব্যে অারও বলেন, ‘অনেক সময় পাঠদান কেন্দ্র পরিচালনা নিয়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা বা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়, যা আমাদের এই বৈধ কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এই পরিস্থিতিতে আমরা খুলনা জেলা প্রশাসকের প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, শিক্ষার্থী এবং মূল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে (ছুটির পর ও শুরুর পূর্বে) আমাদের এই কেন্দ্রগুলো যেন নির্বিঘ্ন চালু রাখতে পারি।’
এতে করে হাজার হাজার বেকার সমাজের যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়। এসময় বিভিন্ন কোচিংয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।