গাইবান্ধা: সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, গাছপালা, ফসলি জমি ও রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে ঘর ও গৃহপালিত পশু। ভাঙনের কবলে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিস্তীর্ণ এই জনপদ।
জানা যায়, গত রোববার থেকে উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের লালচামার, উত্তর লালচামার, ভোরের পাখি, সিঙ্গিজানী, মোশারফের ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলামের বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এছাড়া, এসব ভাঙনকবলিত স্থানে কছিম উদ্দিন, জহুরুল ইসলাম, আঃ সামাদ, আবুল হোসেন, রবিউল ইসলাম, শাহ কামাল, আমিনুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, আবু জাফর, জয়নাল আবেদীন, আমিনুল ইসলাম, মমিনুল ইসলাম, আকাব্বর হোসেন, মোখলেছার রহমান, আব্বাছ আলীসহ অন্তত ৮০ পরিবারের বসতভিটা, গাছপালা, ঘরবাড়ি, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পানির স্রোতে ভেসে গেছে কারও কারও ঘর-দরজা ও গৃহপালিত পশু-পাখি। নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যাও বাড়ছে আর বাড়ছেই। ঘরবাড়ি, গাছপালা সরিয়ে নিতে না পারায় অনেকেরই ঘরবাড়ি, গাছপালা ও আসবাবপত্র স্রোতে ভেসে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে ভোরের পাখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডানতীরের পুরাতন বেড়িবাঁধ, ফসলি জমি, নিকটবর্তী অবস্থানে পাড়া-গ্রাম বসবাসকারী অসংখ্য পরিবারের ঘরবাড়ি, বসতভিটা, রাস্তাঘাট ও গণসংযোগস্থলগুলো।
স্থানীয়রা জানান, কোনোমতে ঘর-দরজা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো মেরামত করতে যে পরিমাণ খরচ হবে, তা দিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা যায়। অনেকেরই ঘর-দরজা অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হলেও নিজের আর কোনো জায়গা না থাকায় পুরাতন বেড়িবাঁধ, অন্যের জায়গা, কোনো প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো চরে ঘরের চালগুলো রাখা হয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নিচু চরগুলোও ডুবে গেছে।
উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে আর পৌরসভা, দহবন্দ, শান্তিরাম, কঞ্চিবাড়ি, শ্রীপুর ও চণ্ডিপুর ইউনিয়নের ২-১টি করে ওয়ার্ডের আংশিক তিস্তা নদীবেষ্টিত। এছাড়া, কাপাসিয়ায় ইউনিয়ন পুরোটাই ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীবেষ্টিত হওয়ায় প্রতিবছর নদীতে পানি বাড়লেই বন্যা ও ভাঙনের শিকার হতে হয় চরাঞ্চলসহ তীরবর্তী জনগোষ্ঠীকে।
নদীর বিভিন্ন চর ও তীরবর্তী মানুষ দাবি করেন, নদীভাঙন ও বন্যা প্রতিরোধে যথোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, গত রোববার থেকে তিস্তা নদীতে পানি বাড়তে থাকে। এতে লালচামার, উত্তর লালচামার, ভোরের পাখি, ভাটী কাপাসিয়া ও সিঙ্গিজানী গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে বিভিন্ন চরে তীব্র নদীভাঙন শুরু হয়। ভাঙন কবলিতদের জন্য সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা মেলেনি। এসব পরিবার চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে দুর্গত পরিবারগুলোর তালিকা উপজেলা প্রশাসনের নিকট পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই তালিকা আজ থেকে কয়েকদিন আগের। সেখানে মাত্র ১৫টি পরিবারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা কমপক্ষে তিন শতাধিক।
অফিসে না পেয়ে তার মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মশিয়ার রহমানকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল কবির জানান, কাপাসিয়া শ্রীপুর, চন্ডিপুর ও হরিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি চরে তিস্তার ভাঙনে আমন ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলি হচ্ছে। এতে করে কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষিখাতে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, ‘হরিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মাওলানা ভাসানী সেতুর কাছ থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত দুর্গত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করে দ্রুত গতিতে কাজ সম্পপন্ন করার লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায়ে যাচ্ছি। এতটা জটিল পরিস্থিতিতে জিও ব্যাগ ফেলে তেমন কোনো ফল হচ্ছেনা। দরকার দ্রুতগতিতে যথোপযোগী স্থায়ী সমাধানের।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘হরিপুরে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ কাপাসিয়া ইউনিয়নে নদীভাঙন কবলিত পরিবারগুলোর জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগের অধীনে সাময়িকভাবে শুকনো খাবার পৌঁছনোসহ আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণে ইউপি চেয়ারম্যানদের নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে সভা করেছি। নদীভাঙ্গণ ও ভাঙ্গণ কবলিত পরিবারগুলোসহ এ জনপদের দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী সমাধানে উচ্চপর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বার্তা পাঠানো হবে।’