সাতক্ষীরা: অবশেষে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদকে বদলি করা হয়েছে। বদলির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডা. ফয়সাল বদলি ঠেকাতে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় চলে যান। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষে এক প্রজ্ঞাপনে তার এই বদলি আদেশ জারি করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আব্দুল হামিদ সই করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের কর্মরত আরএমও ডা. শেখ ফয়সাল আহমেদকে বদলি করে মেহেরপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদে পদায়ন করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, এ আদেশ জনস্বার্থে জারি করা হয়েছে এবং বদলিকৃত কর্মকর্তাদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে দায়িত্বভার হস্তান্তর করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্বভার হস্তান্তর না করলে ষষ্ঠ দিন থেকে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবমুক্ত বলে গণ্য করা হবে।
এছাড়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি ডা. ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে কর্মস্থলে দীর্ঘ অনুপস্থিতি, সিভিল সার্জনের সঙ্গে অসদাচরণ এবং বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালের বায়োমেট্রিক হাজিরা রেকর্ডে দেখা গেছে, গত তিন মাসে তিনি ৫০ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। যে কয়দিন তিনি উপস্থিত ছিলেন তাতে প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি তিনি কাজ করেননি।
এ বিষয়ে আর এম ও ডা. ফয়সালের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার তিনি সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবদুস সালামের অফিসে ঢুকে তার প্রতি মারমুখী আচরণ ও গালিগালাজ করেন। এরপর ওই ঘটনায় ৫ অক্টোবর সিভিল সার্জন মহাপরিচালকের কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। এর পরদিন ৬ অক্টোবর সদর হাসপাতাল থেকে অপসারিত স্বেচ্ছাসেবক ও কিছু ভাড়া করা লোক দিয়ে কয়েকটি ব্যানার বানিয়ে হাসপাতাল সম্মুখ সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে সিভিল সার্জনের অফিস ঘেরাও করেন ডা. ফয়সাল। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এর আগে, রোগীকে কান ধরে ওঠবস করানোর অভিযোগেও তিনি আলোচনায় আসেন। অভিযোগ অনুযায়ী, সিরিয়াল না মেনে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারী রোগীকে জুতা দিয়ে পিটিয়ে কান ধরে ওঠবস করান তিনি। এছাড়া, ভুক্তভোগী নারীর মেয়ে মাকে বাঁচাতে গেলে তার শ্লীলতাহানির শিকার হন।
ঘটনাটি ঘটে গত বছর ৯ নভেম্বর, সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া আমতলায় অবস্থিত সাতক্ষীরা হার্ট ফাউন্ডেশনের মালিকানাধীন ডা. ফয়সালের চেম্বারে। ভুক্তভোগী নারী বিউটি বেগম (৫৫) সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার শাকদাহ এলাকার মোকাজ্জেল হোসেনের স্ত্রী। এ ঘটনায় তারা সাতক্ষীরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর অবশেষে তাকে সাতক্ষীরা থেকে মেহেরপুরে বদলি করা হলো।