চট্টগ্রাম ব্যুরো: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ক্ষমতার অপব্যবহার, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার এবং বিভিন্ন করপোরেট শিল্পগ্রুপের কাছ থেকে চাঁদাবাজি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডকে (ইউসিবিএল) পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে আধিপত্য তৈরি করে প্রায় একযুগ ধরে জাবেদ বিভিন্ন অপকর্ম করে গেছেন, যা এখন ব্যাংকটির সেসময়কার ঊর্ধ্বতনদের জবানিতে বেরিয়ে আসছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তে নেমে ইউসিবিএল’র বেশ কয়েকজন সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যারা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকটির সাবেক কোম্পানি সচিব ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তাহমিদুজ্জামান এবং ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের ব্যক্তিগত সচিব (পিএ) রঞ্জন কুমার দাস চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য ফাঁস করেছেন বলে জানা গেছে।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে এরই মধ্যে ছয়টি মামলা করেছে দুদক। তার বিষয়ে আরও অভিযোগ তদন্তনাধীন আছে। এসব মামলায় জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য আসামি হিসেবে আছেন।
এর মধ্যে ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগে গত ২৪ জুলাই দুদকের করা একটি মামলা তদন্তে নেমে জাবেদের পারিবারিক শিল্পগোষ্ঠী আরামিট গ্রুপের দুই সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আব্দুল আজিজ ও উৎপল পালকে গ্রেফতার করা হয়। মূলত তাদের গ্রেফতারের পরই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তাদের কাছ থেকে দুদক বাংলাদেশ থেকে পাচার করা টাকায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিঙ্গাপুর, ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াসহ মোট নয়টি দেশে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলার তথ্য পায়। আজিজ ও উৎপলের দেওয়া তথ্য যাচাইবাছাই করতে গিয়ে দুদক তাহমিদুজ্জামান ও রঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জাবেদের দুর্নীতি-টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্বে থাকা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইউসিবিএল’র সাবেক দু’জন কর্মকর্তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। উনারা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিভিন্ন ঘটনার অন্যতম সাক্ষী। তারা আমাদের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। একেবারে ডকুমেন্টারি আকারে দিয়েছেন। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ আমরা পেয়েছি। কয়েকটি করপোরেট গ্রুপের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচারসহ আরও বেশকিছু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। এখন আমরা সেগুলো যাচাইবাছাই করছি।’
দুদকের চট্টগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোকাররম হোসাইন সারাবাংলাকে জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে ইউসিবিএল থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচারের মামলায় সাক্ষী হিসেবে তাহমিদুজ্জামান ও রঞ্জন দাস বুধবার (৮ অক্টোবর) আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ইব্রাহিম খলিল তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের উত্থান
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রয়াত শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড় ছেলে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। সেখান থেকে বাবু একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাবেদ প্রথমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হিসেবে পারিবারিক ব্যবসা আরামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড দেখাশোনা করতেন। ব্যবসায়ী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও একই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
২০১২ সালে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের রাজনীতিতে অভিষেক হয়। সরাসরি সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে ‘খালি মাঠে গোল দেন’। এর পর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে প্রথমবার প্রতিমন্ত্রী ও দ্বিতীয় দফায় পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। ২০২৪ সালে আবারও মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে টিআইবি তার ‘ভালো মানুষের’ জারিজুরি ফাঁস করে দেওয়ায় মন্ত্রিসভায় আর জায়গা হয়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লন্ডনে তার অবস্থানের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।
ইউসিবিএলে একচ্ছত্র আধিপত্য
২০১৪ সালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ মন্ত্রী হওয়ার পর তাকে ইউসিবিএল’র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে হয়। তবে স্ত্রী, ভাই ও নিকটাত্মীয়দের দিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আধিপত্য ধরে রাখেন। ২০১৭ সালে ব্যাংকের বিশেষ সাধারণ সভায় সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে স্ত্রী রুকমিলা জামানকে চেয়ারম্যান করেন, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনিকে করেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান। সেই সভায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাবেদের ছোট ভাই আসিফুজ্জামান জিমি, মামা নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং পারিবারিক বন্ধু বশীর আহমেদ ও বজল আহমেদ।
দুদক সূত্র জানায়, জাবেদ তখন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রী। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তিনি সেই সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকেন। তার পরিবারের সদস্যদের বাইরে থাকা পরিচালকরা বিরোধিতা দূরে থাক, টুঁ শব্দও করতে পারেননি। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জাবেদ তার বড় বোন রোকসানা জামান, মেজ বোন আফরোজা জামান এবং আরামিট গ্রুপের মো. শাহ আলম, সৈয়দ কামরুজ্জামান ও আকসাদ আলী সরকারকে পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করেন। আর এভাবেই ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেন জাবেদ।
নামেই চেয়ারম্যান রুকমিলা
সূত্রমতে, জিজ্ঞাসাবাদে তাহমিদুজ্জামান ও রঞ্জন দুদককে জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে ইউসিবিএলের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সভাপতিত্ব করার কথা ছিল রুকমিলা জামানের। কিন্তু তিনি সভায় উপস্থিত থাকতেন না। তিনি পরিচালনা পর্ষদের পাশাপাশি ঊর্ধ্বতনদের তার স্বামী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্দেশনা মেনে চলার মৌখিক আদেশ দিয়েছিলেন। পর্ষদের প্রত্যেক সভায় নিয়ম ভেঙে উপস্থিত থাকতেন জাবেদ এবং সকল সিদ্ধান্ত তিনি দিতেন, যা বিনা বাক্যব্যয়ে পাস করা হতো। পরবর্তী সময়ে সেইসব সিদ্ধান্তে রুকমিলার সই এনে দিতেন জাবেদ।
রঞ্জন দাস দুদককে জানান, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ব্যাংকের কোনো সভায় রুকমিলা জামান উপস্থিত ছিলেন না। তিনি অফিসেও যেতেন না। তার পরিবর্তে ব্যাংকের কোনো পদে না থেকেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রতিদিন মন্ত্রণালয় থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গুলশানে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যেতেন এবং রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান করতেন।
ইউসিবিএল থেকে ২৫০০ কোটি টাকা আত্মসাত করে বিদেশে পাচার
২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভুয়া ও বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ইউসিবিএল থেকে ২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেন বলে তাহমিদুজ্জামানের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে দুদক।
সূত্রমতে, আরামিট গ্রুপের কর্মচারী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের নামে একাধিক ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। এদের মধ্যে এমিন্যান্ট ট্রেডার্সের মালিক ফোরকান উল্লাহ চৌধুরীর নামে ২০ কোটি, ভিশন ট্রেডিংয়ের মালিক ফরমান উল্লাহ চৌধুরীর নামে ২৫ কোটি, রিলায়েবল ট্রেডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরীর নামে ১৫ কোটি, ক্রিসেন্ট ট্রেডার্সের মালিক নুরুল ইসলামের নামে ২৫ কোটি, প্রগ্রেসিভ ট্রেডিংয়ের মালিক জসিম উদ্দিনের নামে ২৩ কোটি এবং মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক মিছবাহুল আলমের নামে ২১ কোটি টাকাসহ মোট ১২৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরবর্তীতে সেগুলো আত্মসাত করা হয়। বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো ভিত্তি ছিল না।
এছাড়া ইউসিবিএলের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দুদক তথ্য পেয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ তার আরামিট গ্রুপের কর্মচারী আব্দুল আজিজের ইমপেরিয়াল ট্রেডিংয়ের নামে থাকা আলাদা দুটি ব্যাংক হিসেব নম্বরে ৫১৫ কোটি টাকা ও ৩৮৬ কোটি টাকা, জাহাঙ্গীর আলমের ক্লাসিক ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫১ কোটি টাকা, মিছবাহুল আলমের মডেল ট্রেডিংয়ের নামে ৫১৯ কোটি টাকা, মোহাম্মদ জাহিদের রেডিয়াস ট্রেডিংয়ের নামে ৮৩ কোটি টাকা, মো. ফরিদ উদ্দিনের লুসেন্ট ট্রেডিংয়ের নামে ১১০ কোটি টাকা এবং শেখ ফোরকানের ইমিনেন্ট ট্রেডিংয়ের নামে ৬৩ কোটি টাকাসহ মোট ২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা জমা করে পরবর্তী সময়ে সেগুলো তুলে নেন। আবার সেই টাকা আরামিট গ্রুপের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুদক।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক সূত্র জানায়, ইউসিবিএলের পরিচালনা পর্ষদের সভায় জাবেদের উপস্থিতি ও একচ্ছত্র দাপটের কারণে এসব ঋণ প্রস্তাবের ওপর দ্বিমত করার সাহস ও সুযোগ কারও ছিল না। এছাড়া ‘গোঁজামিলের’ ঋণ প্রস্তাবগুলো সাধারণত জমা করা হতো সভা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে। জাবেদের নির্দেশে সেগুলো শেষমুহূর্তে ডিজিটাল অ্যাপে আপলোড করে আলোচ্যসূচি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হতো।
শিল্পগ্রুপ থেকে ‘চাঁদাবাজি’
তাহমিদুজ্জামান ও রঞ্জন দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দুদক সূত্র জানায়, মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ইউসিবিএল ব্যাংকে বসে দেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট শিল্পগ্রুপের মালিকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। জাবেদের পাশাপাশি তার ছোট ভাই ব্যাংকের নির্বাহী চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনিও বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপের মালিকদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করতেন।
সূত্র আরও জানায়, দুই ভাইয়ের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর এসব শিল্পগ্রুপের পক্ষ থেকে ইউসিবিএলে করা ঋণ প্রস্তাব পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন দেওয়া হতো। পরবর্তী সময়ে অনুমোদিত ঋণের অর্থ বেনামি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেব নম্বরে স্থানান্তরের মাধ্যমে নগদে উত্তোলন করে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হতো।
গ্রেফতার হওয়া আরামিট গ্রুপের দুই কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ ও উৎপল পুরো বিষয় দেখভাল করতেন বলে দুদককে তথ্য দিয়েছেন তাহমিদুজ্জামান ও রঞ্জন। এছাড়া বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ থেকে জাবেদের চাঁদাবাজির চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন ইউসিবিএল চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানের পিএস রঞ্জন কুমার দাস।
সূত্রমতে, জাবেদের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের কাছে গিয়ে রঞ্জন কুমার দাস চেক বা পে-অর্ডার আনতেন। সেগুলো সরাসরি জাবেদকে পৌঁছে দিতেন অথবা তার হোয়াটস অ্যাপে পাঠাতেন। এমনকি তিনি কোটি কোটি টাকা এনে জাবেদ ও তার ভাই রনি’র খোলা বিভিন্ন বেনামি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে জমা দেন।
উল্লেখ্য, দুই শিল্পপতির কাছ থেকে ৭৫ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গত ২২ সেপ্টেম্বর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুই শিল্পপতি হলেন- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের এইচএম শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সরোয়ার আলম এবং নগরীর কালুরঘাটের ওয়েলমার্ট লিমিটেডের (টেক্সটাইল) সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম।
এইচএম শিপব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের পারিবারিক মালিকানায় থাকা মোস্তফা হাকিম গ্রুপের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান৷ সরোয়ার আলম সাবেক মেয়রের ছেলে। মনজুর বিএনপির মনোনয়নে মেয়র হলেও সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
আর ওয়েলমার্ট লিমিটেড (টেক্সটাইল) চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী ওয়েল গ্রুপের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ গ্রুপের মালিকানায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের পরিবার। সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম ছালামের ভাই।
এইচএম শিপব্রেকিংয়ের এমডি সরোয়ার আলমের কাছে ৫৫ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ ৭ জনকে আসামি করা হয়। বাকি আসামিরা হলেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট গ্রুপের এজিএম আবদুল আজিজ, মিসবহুল আলম, ইয়াছিনুর রহমান ও ইউসুফ চৌধুরী।
অন্যদিকে ওয়েলমার্ট লিমিটেডের এমডি সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলাসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। বাকি তিনজন হলেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট গ্রুপের এজিএম আবদুল আজিজ ও ইয়াছিনুর রহমান।
উভয় মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ভূমিমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার দুই শিল্পপতিকে ইউসিবিএল থেকে ৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করেন। পরে একইভাবে চাপ প্রয়োগ করে সমপরিমাণ টাকার চেক তাদের কাছ থেকে আদায় করেন। এরপর চেকের মাধ্যমে কয়েক দফায় এ টাকা উত্তোলন করে নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর, ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্নভাবে উত্তোলন করে বিদেশে পাচার করেন।