Wednesday 08 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করে তামাক চাষ বহাল রাখা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৩১ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৩৬

ঢাকা: ‘কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশের ২৬ হাজার ৪৭৫ হেক্টর আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। এই বিশাল আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষের ফলে জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করে তামাক চাষ বহাল রাখা কোনোভাবেই একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্রের জন্য কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না।’

বুধবার (৮ অক্টোবর) জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল সভায় তামাক চাষ, উৎপাদন, বিপণন বন্ধ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবান্ধব বাংলাদেশ বিনির্মাণে হেলথ প্রমোশনে পৃথক বরাদ্দের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

‘কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ’ অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে সভায় বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এইড ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা।

তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত ছিলেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মিলন বাড়ই, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের শিক্ষার্থী নির্ঝরা ফাল্গুনী রশীদ, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী রুমান, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সানজিদা সিদ্দিকা। সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তার।

অ্যাড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘তামাক চাষ লাভজনক হিসেবে প্রচার করা হলেও এটি নিছক মিথ্যা প্রচারণা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তামাক উৎপাদনকারী উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০টি দরিদ্র জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তামাক প্রাণ প্রকৃতিতেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।’

উল্লেখ্য, হালদার পাড়ে তামাক চাষের ফলে ব্যাপক দূষণের কারণে ২০১৬ সালে নদীতে মাছের ডিম উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা অংশে ১৮(১) অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ‘ভয়েস অব ডিসকভারি’ মামলায় দেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা দেন। সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা থাকলেও নির্বাহী বিভাগের কর্মকর্তারা এই নির্দেশনা মানছেন না। রাষ্ট্রের উচিত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া এবং সেই আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

তরুণ প্রতিনিধিরা বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রণোদনায় প্রলুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতাশক্তি কমে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এসব জমিগুলো খাদ্যশস্য চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তামাক উৎপাদনে নারী ও শিশুরা নিয়োজিত থাকার ফলে তারা স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুরা স্কুলে যেতে না পারায় শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। তামাক পাতা প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন হয় যার ফলে প্রতিনিয়ত বন উজাড় হচ্ছে। পার্বত্য বা পাহাড়ি অঞ্চলে ঢালু জমিতে তামাক চাষের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাটির ক্ষয়সহ আকস্মিক বন্যার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তামাক চাষের বিভিন্ন ধাপে কার্বন নিঃসরণের ফলে বায়ু দূষণ হচ্ছে। তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা দ্রুত চূড়ান্ত করা জরুরি।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/এইচআই

জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস তামাক চাষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর