Thursday 09 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভেটেরিনারি হাসপাতালে টাকা ছাড়া মিলছে না বিনামূল্যের চিকিৎসা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৪৭ | আপডেট: ৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:০৯

ডিমলার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। ছবি: সারাবাংলা

নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে সেবা পেতে ঘুষের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। বন্যার পর একের পর এক গরু অসুস্থ হলেও প্রান্তিক খামারিরা পাচ্ছেন না বিনামূল্যের চিকিৎসা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাসপাতাল খোলা থাকলেও চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। আবার হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে দিতে হয় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ‘ভিজিট’। টাকা না দিলে মেলে না চিকিৎসা। ফলে মারা যাচ্ছে গরু, ক্ষতির মুখে পড়ছেন খামারিরা।

উপজেলার ছোটখাতা গ্রামের প্রান্তিক খামারি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার গরুর বাছুরের হার্নিয়া হয়েছে। প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভেটেরিনারি সার্জন বললেন অস্ত্রপচার করতে হবে। তবে এখানে হবে না। বাড়িতে নিয়ে যান, সেখানে অস্ত্রোপচার করে দেব। তবে খরচ দিতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। ভেবেছিলাম সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই ফিরে আসতে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

একই এলাকার খামারি ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘গরু অসুস্থ হলে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার পাই না। পরে ফোনে বললে বলেন-বাড়িতে গিয়ে দেখবেন, কিন্তু টাকা লাগবে। না দিলে আসেন না।’

চরখড়িবাড়ি এলাকার রশিদুল ইসলাম জানান, বন্যার সময় চর এলাকা থেকে গরু নিয়ে হাসপাতালে আসতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু হাসপাতালে গেলে ডাক্তার থাকেন না। ফিরে গিয়ে দেখি গরু মরেছে। আমরা গরিব মানুষ, দুই-তিন হাজার টাকা দিয়ে ডাক্তার ডাকব কীভাবে?’

একই অভিযোগ কুটির ডাঙ্গা এলাকার খামারি সুলতান আলীর, যিনি নিজের দুটি গরু হারিয়েছেন। সুলতান জানান, বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাওয়ার কথা। কিন্তু আগে চুক্তি করতে হয়। দুই হাজার টাকা না দিলে ডাক্তার গরু দেখেন না। বাধ্য হয়ে পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়। ফলে ভুল চিকিৎসায় সম্প্রতি তার দুটি গরু মারা গেছে।

স্থানীয় খামারিরা অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আসাদুজ্জামান প্রায়ই হাসপাতালে থাকেন না। সরকারি সেবা বিনা খরচে দেওয়ার বদলে তিনি বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা করেন এবং এর জন্য দাবি করেন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এমনকি উপজেলা শহরের বিভিন্ন বাজারে ব্যক্তিগত চেম্বারও চালাচ্ছেন।

বাবুরহাট সদরের খামারি আনিছুর ইসলাম বলেন, ‘ওষুধ থাকে তবু বাইরে থেকে কিনতে বলে। ঘুষ না দিলে চিকিৎসা মেলে না। এতে আমাদের সর্বনাশ হচ্ছে।’

প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, সরকারি হাসপাতাল মানেই বিনামূল্যের সেবা-কিন্তু বাস্তবে ঘুষ ছাড়া চিকিৎসা মিলছে না। তাদের দাবি, দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি এই হাসপাতালকে কার্যকর করা হোক, যাতে তারা প্রকৃত সেবা পান।

এ বিষয়ে প্রথমে তিন থেকে চারদিন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। একাধিকবার প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়েও তার দেখা মেলেনি। পরে দেখা মিললেও তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মদন কুমার রায় বলেন, সরকারি হাসপাতালে সব চিকিৎসা ও অপারেশন বিনামূল্যে। কেউ যদি অর্থ নেয়, তা অনৈতিক। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে দায়িদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/জিজি

বিনামূল্যের চিকিৎসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর