Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জরাজীর্ণ কলোনির বাসিন্দাদের অপেক্ষায় সুরম্য অট্টালিকা


৯ জুলাই ২০১৮ ২২:০৪

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: কোটি মানুষের রাজধানী যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন আজিমপুর কলোনি এলাকার ভবনগুলো কি আর সেকেলে থাকবে? পুরোনো, জরাজীর্ণ লম্বাটে ভবনগুলোর সময় তাই ফুরিয়ে এসেছে। এ মাসেই ভাঙা শুরু হবে কলোনির ইঁদুরের আখড়া খ্যাত এসব ভবন।

বছরের পর বছর ধরে এখানকার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে যারা বসবাস করে আসছেন ,তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সু-উচ্চ, সুরম্য অট্টালিকা। আধুনিক সব সুবিধা আর খোলামেলা পরিবেশে থাকা এখানকার পুরোনো বাসিন্দার এখন ঠাঁই হচ্ছে ২০ তলা ভবনগুলোতে। সে পর্যন্ত ভবনগুলোর প্রধান ফটক এভাবে তালাবদ্ধই থাকবে। বন্ধ থাকবে ফ্ল্যাটের দরজাগুলো।

সোমবার (৯ জুলাই) দুপুরে আজিমপুর কলোনির ১ নম্বর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সামনে দুই রুমের একটি এক তলা ভবনে বরাদ্দ পাওয়া কর্মচারীদের কাছ থেকে কাগজপত্র বুঝে নেওয়া হচ্ছে। নিউ মার্কেট এলাকার গণপূর্তের অফিস থেকে নির্ধারিত ছাড়পত্র নিয়ে সরকারি কর্মচারীরা তা জমা দিচ্ছেন।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার জানালেন, সোমবার আবেদনসহ ছাড়পত্র জমা নিয়ে মঙ্গলবার (১০ জুলাই) চাবি হস্তান্তর করা হবে। যারা বরাদ্দ পেয়েছেন, তারা চাবি পাওয়ার পর যেকোনো সময় উঠতে পারবেন। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঠলে ভালো হয়।

সরাবাংলার এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ইয়াসমিন নাহারের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে চাকরি করেন ইয়াসমিন। ১ নম্বর ভবনের ৭ তলায় ফ্লাট বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে ওই ভবনেরই পেছনের বাসাটিতে তার বসবাস। সারাবাংলা’কে তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে এই কলোনীতে আছি। ছেলেমেয়েদের এখানে থেকেই ভালো জায়গায় পড়াচ্ছি। তাই এ কলোনির প্রতি একটা মায়া জন্মেছে। এখন নতুন বাসাটা এখানে হওয়ায় আরো ভালো পরিবেশ পাবে বাচ্চারা।

বিজ্ঞাপন

পুরনো কলোনি এখন আর বসবাসের উপযোগী নেই জানিয়ে ইয়াসমিন বলেন, সেখানকার বাসাটা অনেকটা মেস কিংবা ব্যারাকের মতো। কোনো বারান্দা নেই। দুইটি বড় বড় রুম। কোনো সিস্টেমেই পড়ে না। মাথার ওপর পলেস্তারা খসে পড়ে। ইঁদুরের অত্যাচার তো আছেই।

তিনি আরও বলেন, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় এসেছি নতুন বাসা বুঝে নেওয়ার কাজ করতে। অনেক ঝামেলা হচ্ছে। এখানে সেখানে দৌঁড়াতে হচ্ছে। তারপরও ভালো লাগছে যে এ ভবনের বাসাটা অনেক ভালো হবে।

কথা হয় গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী রওশন আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথম দফায় আজিমপুর কলোনিতে মোট ছয়টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার ৭৬টি ইউনিটের প্রত্যেকটিতে একটি করে পরিবার বসবাসের সুযোগ পাবে। এর মধ্যে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১ হাজার ও ৮শ বর্গফুটের ফ্ল্যাট পাবেন কর্মচারীরা। দাপ্তরিক কাজকর্ম শেষে বরাদ্দ পাওয়া কর্মচারীরা ফ্লাটগুলো বুঝে পাবেন বলেও জানান তিনি।

কলোনির ২ নম্বর ভবনে গিয়ে দেখা যায় বরাদ্দকৃতদের জন্য ভবনগুলোর ফ্লাটের চাবি এক জায়গায় করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে সংশ্লিষ্ট ছাড়পত্র নিয়ে আসা সাপেক্ষে এ চাবিগুলো হস্তান্তর করা হবে।

গণপূর্ত বিভাগের সিনিয়র প্রকৌশলী জয় জহিরুল হক রাজু জানান, নতুন এসব বহুতল ভবনে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা আছে। ওয়াসার পানির নিজস্ব ব্যবস্থাপনা, সার্বক্ষণিক সিসি টিভি নিয়ন্ত্রণ, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লিফট সুবিধা রয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনে থাকছে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী।

৫ নং ভবনের ১৮ তলার এ- ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছেন জাহানারা পারভীন। তবে উদ্বোধনের পর এখনও তিনি তার বাসা দেখেননি। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মঙ্গলবার সকালেই সব দাপ্তরিক কাজ শেষে চাবি পেতে চান তিনি। তবে এ নিয়ে কোথায় কোথায় যেতে হবে, সে বিষয়ে সঠিক ধারণা নেই তার। তাই দুপুরে সচিবালয় থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এসেছেন কলোনিতে।

বিজ্ঞাপন

জাহানারা পারভীন বলেন, এখন তিনি যে ভবনে রয়েছেন সেখানে বড় বড় ইঁদুর। বাসার জিনিসপত্র কিছু কিছু গুছিয়েছি। আর ইঁদুরের কারখানা আবিষ্কার করছি। এত বছর ধরে আমরা ইঁদুরকে সঙ্গে নিয়েই ভাত খেতাম, বলেন তিনি। নতুন ভবনে আবার ইঁদুর আসবে কি না— এমন আশঙ্কাও রয়েছে জাহানারার।

ভাড়া বাসার চেয়ে কলোনির ভাড়াও কম নয় উল্লেখ করে কলোনির বাসিন্দা ইয়াসমিন জানান, এখানে ২৮ হাজারের ওপরে যাদের বেসিক, তারা বরাদ্দ পাচ্ছেন এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। আর এর নিচে যারা, তারা পাবেন ৮ শ বর্গফুটের ফ্ল্যাট।

তবে বাস্তবে এ ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন এর বেশি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব ফ্লাটে একাধিক বেড রুম , টয়লেট ও দুইটি করে বারান্দা রয়েছে।

কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে করে জানা গেছে, রাজধানীর অন্যান্য কলোনির চেয়ে আজিমপুরের কলোনিতেই সরকারি কর্মচারীদের আকর্ষণ বেশি। তারা জানান, এখান থেকে সরকারি অফিসগুলোর দূরত্ব অনেকটা কম, ভেতরে খেলার মাঠ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান কাছাকাছি হওয়ায় এখানে আসার জন্য মন্ত্রণালয়ে তদবির চলে প্রায় সারাবছরই। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তদবির চলে, সে বিষয়ে তথ্য দিতে নারাজ এসব বাসিন্দারা।

এর আগে, গত শনিবার রাজধানীর আজিমপুর ও মতিঝিলের সরকারি কলোনিতে মোট ১০টি নতুন বহুতল ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এমএস/জেডএফ

আজিমপুর কলোনি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর