ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের সংখ্যা কমাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দীর্ঘদিনের জমে থাকা জট খুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য নতুন বিরোধ নিষ্পত্তি প্রবিধানমালা অনুমোদন করেছে।
সম্প্রতি বিএসইসি’র এক বৈঠকে ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বিরোধ নিষ্পত্তি) প্রবিধানমালা, ২০২৫’ এবং ‘চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (বিরোধ নিষ্পত্তি) প্রবিধানমালা, ২০২৫’ অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিএসইসি সূত্র জানায়, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো সালিশ প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করা, ব্রোকার ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ কমানো এবং কমিশনের তদন্তের চাপ হ্রাস করা।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা জানান, ব্রোকারেজ হাউজ বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে প্রায়ই ছোটখাটো জটিলতা দেখা দেয়। কিন্তু ঝামেলা বা ভয়ভীতির কারণে অনেকেই অভিযোগ করেন না। কেউ করলে তার নিষ্পত্তি হতে সময় লেগে যায়। তাদের আশা, নতুন এই প্রবিধানমালা এসব সমস্যা কমিয়ে আনবে এবং দ্রুত সমাধান দেবে।
নতুন বিধি অনুযায়ী, প্রতিটি এক্সচেঞ্জে একটি সালিশ প্যানেল (বিরোধ নিষ্পত্তি বোর্ড) গঠন করা হবে। পাশাপাশি একজন রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি হবেন এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ডিজিএম বা তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সালিশ প্যানেলে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, আইনজীবী ও অভিজ্ঞ বাজার বিশেষজ্ঞরা। বিনিয়োগকারীরা নির্ধারিত ফরমে অভিযোগ দাখিল করবেন, এরপর রেজিস্ট্রার উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন।
যদি আলোচনায় সমাধান না হয়, বিষয়টি সালিশ প্যানেলের কাছে যাবে। উভয় পক্ষ অনুমোদিত তালিকা থেকে নিজ নিজ সালিশকারী বেছে নেবে। সাক্ষ্য ও নথি যাচাই শেষে সালিশকারীরা রায় দেবেন—সংখ্যাগরিষ্ঠ মতই চূড়ান্ত বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে যে কোনো পক্ষ বিএসইসি বা আদালতে আপিল করতে পারবে।
এখন বিনিয়োগকারীরা চাইলে বিএসইসি’র অনলাইন অভিযোগ মডিউল অথবা স্টক এক্সচেঞ্জের সালিশ ইউনিট—উভয় জায়গাতেই অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। ছোটখাটো বিরোধগুলো এক্সচেঞ্জের সালিশ বিভাগেই নিষ্পত্তি করা হবে। এতে এক্সচেঞ্জগুলো বিনিয়োগকারীদের সমস্যা বোঝার পাশাপাশি নিজেদের প্রশাসনিক কাঠামোও উন্নত করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের সালিশ কাঠামো প্রণয়নের প্রস্তাব ২০১৯ সাল থেকেই ঝুলে ছিল। সরকারি গেজেটে প্রকাশের পরই প্রবিধানমালাগুলো কার্যকর হবে।
বিএসইসি মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, সালিশ প্যানেল কার্যকর হলে অনেক অভিযোগ প্রাথমিক পর্যায়েই মীমাংসা হয়ে যাবে। এতে কমিশনের তদন্তের চাপ কমবে। তিনি আরও যোগ করেন, এই ব্যবস্থা আগে থাকলে অসাধু ব্রোকারদের তছরুপের অনেক ঘটনাই আগেভাগে রোধ করা যেত।”
তার মতে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ অনুযায়ী এক্সচেঞ্জগুলো তাদের নিজস্ব প্রবিধান তৈরির ক্ষমতা রাখে। ফলে সালিশ প্যানেলের রায় আইনি বৈধতা পাবে এবং বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলবে।