ঢাকা: একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংকের সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যাংকগুলোর মালিক, পরিচালনা পর্ষদ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সরকার। বিষয়টি নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর মন্দ ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারেরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ‘সমস্যাগ্রস্ত ইসলামিক শরীয়াহভিত্তিক ৫টি ব্যাংক রেজল্যুশনের মাধ্যমে নতুন ১টি ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব’ অনুমোদনকালে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন ব্যাংক পাঁচটি হচ্ছে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’ ও ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর বিধান অনুযায়ী হস্তান্তরকারী ব্যাংকগুলোর মালিক/শেয়ারহোল্ডারদের পাওনা নিষ্পত্তি করা হবে। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মালিকানা দায় দ্বারা সীমিত।
কিন্তু পর্যালোচনায় দেখা যায়, হস্তান্তরকারী ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকটির নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক এবং বিপুল পরিমাণ মূলধন ঘাটতি, মন্দ সম্পদ ও তারল্য সঙ্কট থাকায় ব্যাংকগুলোর সকল দায় ও ঝুঁকি হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের মালিক ও শেয়ারহোল্ডারদের বহন (দায় দ্বারা সীমিত) করতে হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়, এ প্রেক্ষিতে হস্তান্তরকারী ব্যাংকগুলোর উচ্চ মূলধন ঘাটতি ও নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক থাকায় চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় মালিক/শেয়ারহোল্ডারদের কোনো দাবি পরিশোধের সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তি আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থ ব্যাংক রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশোধ করা যেতে পারে এবং এ লক্ষ্যে প্রয়োজনে আমানত সুরক্ষা তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রস্তাবে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর শেয়ার প্রতি বাজার দর ও নিট অ্যাসেট ভ্যালু (এনভি) ছিল যথাক্রমে- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ৩.৭০ টাকা ও (-২১৩.৫১ টাকা);
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ১.৬০ টাকা ও (-১১৭.৭২ টাকা);
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ২.২০ টাকা ও (-৪৩৮.৮১ টাকা);
ইউনিয়ন ব্যাংক: ১.৭০ টাকা ও (-২২৪.৯৭ টাকা) এবং
এক্সিম ব্যাংক: ৩.৪০ টাকা ও (-৭৫.৭৪ টাকা)।
প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে অর্থ বিভাগ সরকারের পক্ষে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের মালিক হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এ মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা যেতে পারে। নতুন ব্যাংক স্থাপনে একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অর্থ বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে। ব্যাংকটির অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, বেইল ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে। বাকি ২০ হাজার কোটি টাকার যোগান দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা নগদ এবং অবশিষ্ট ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে।
উপদেষ্টা পরিষদে ৫ ব্যাংক একীভূতকরণের প্রস্তাব অনুমোদনের পর বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) এক ব্রিফিং-এ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানান, ব্যাংকগুলো একীভূত করার ফলে কেউ চাকরি হারাবেন না এবং কোনো আমানতকারীও তার আমানত হারাবেন না।