Monday 01 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজার যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পকে কেন বিশ্বাস করল হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৩০ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৪৭

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ সময় ধরে ‘শত্রু’ হিসেবে দেখলেও এবার অবিশ্বাসের দেয়াল ভাঙল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখল এক অপ্রত্যাশিত নাম—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প। এক সময় যাকে তারা ‘বর্ণবাদী’ ও ‘বিশৃঙ্খলার উপকরণ’ বলে অভিহিত করেছিল, এখন সেই ট্রাম্পকেই বিশ্বাস করে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি নিয়েছে হামাস।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ফোনালাপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পর  ট্রাম্পের ওপর হামাসের বিশ্বাস তৈরি হয় যে, নেতানিয়াহুকে থামাতে পারবেন তিনি। আর এই বিশ্বাসের জায়গা থেকেই বুধবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় তারা, যা শুক্রবার (১০ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সূত্রপাত কাতারের রাজধানী দোহায়। সেখানে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের একটি হামলার পর কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে সরাসরি ফোনালাপ হয়। ওই ফোন কলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘ক্ষমা’ চান নেতানিয়াহু।  আর এই কথোপকথনটি চলে ট্রাম্পের তত্ত্বাবধানে। হামাসের নেতারা বিষয়টিকে শুধু ‘কূটনৈতিক সংকেত’ হিসেবেই দেখেননি; বরং এটিকে ট্রাম্পের কার্যকর ভূমিকার ইঙ্গিত হিসেবে নিয়েছেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইসরায়েল পুনরায় হামলা শুরু করে। সেই সময় ট্রাম্প প্রশাসনের নিরব ভূমিকা তাদের হতাশ করেছিল। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। মিসরে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি আলোচনার টেবিলে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনদের সরাসরি সম্পৃক্ততা হামাসকে এক ধরনের ‘নিশ্চয়তা’ দেয় যে, নতুন করে হামলা শুরুর অনুমতি ইসরায়েলকে দেওয়া হবে না।

হামাসের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্প যে কতটা উদগ্রীব সেটি সর্বশেষ আলোচনার সময় বোঝা গেছে। তিনি আলোচনা চলাকালীন তিনবার ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেন। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ উইটকোফ ও জামাতা জার্ড ক্রুসনারও আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। এই ঘটনাপ্রবাহে হামাসের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর রাখার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থাকবে।

এই যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, সব ইসরায়েলি সেনাকে গাজা থেকে প্রত্যাহার না করার শর্তেই সব জিম্মিকে ছেড়ে দিচ্ছে হামাস। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই জিম্মিরাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ‘কৌশলগত সম্পদ’। একে একে এই হাতিয়ার ছেড়ে দিয়ে ট্রাম্পের ওপর ভরসা করা—এটিকে অনেক বিশ্লেষক ‘রাজনৈতিক জুয়া’ হিসেবেই দেখছেন।

এক ফিলিস্তিনি সূত্র রয়টার্সকে বলেন, “আমরা জানি এটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ইসরায়েল আবারও যুদ্ধ শুরু করতে পারে। কিন্তু এবার আমরা বিশ্বাস করছি, ট্রাম্প সেটা হতে দেবেন না।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ২০ দফা প্রস্তাবের সবগুলো বাস্তবায়িত না হলেও এ যুদ্ধবিরতি নতুন বাস্তবতা তৈরি করতে পারে। ইরান–ইসরায়েল সংঘাত ঠেকানোয় তার ভূমিকা ও নেতানিয়াহুকে কাতারের কাছে দুঃখ প্রকাশে বাধ্য করানো ইঙ্গিত দেয়, এই আলোচনায় ট্রাম্পের প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ কারনে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সাথেই সাথেই ইসরায়েলকে ট্রাম্প আবারও যুদ্ধ শুরু করতে দেবেন না।

একদিকে যুদ্ধের ক্লান্তি, অন্যদিকে অনিশ্চয়তা। কিন্তু হামাস ও ইসরায়েলের এই নতুন সমীকরণে বড় প্রশ্ন এখন— ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিশ্চয়তা’ কতটা টিকে থাকবে? আর সেটিই ঠিক করে দেবে, এই যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি নাকি স্থায়ী শান্তির পথে এক নতুন পদক্ষেপ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর