Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় পঞ্চম ঢাকা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪৭

ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বিশ্বের বিভিন্ন শহরে দিন দিন বাড়ছে বায়ুদূষণ। শিল্পায়ন, যানবাহনের নির্গমন, নির্মাণকাজের ধুলাবালি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক নগরেই বাতাসের মান দ্রুত নেমে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মেগাসিটি ঢাকাও সেই দূষণের মারাত্মক চক্রে বহু বছর ধরে আটকে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত দেখা গেলেও রোববার (১২ অক্টোবর) আবারও রাজধানীর বায়ুমান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে নেমে এসেছে।

আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইকিউএয়ারের (IQAir) তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বায়ুমান সূচক (একিউআই) ছিল ১৬৫, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। একই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম।

বিজ্ঞাপন

এদিনের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, যার একিউআই স্কোর ১৮৭। দ্বিতীয় স্থানে ভারতের কলকাতা (১৭১), তৃতীয় স্থানে ইতালির মিলান (১৭০), আর চতুর্থ স্থানে ভারতের দিল্লি (১৬৯)।

বায়ুমানের মানদণ্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশনা অনুযায়ী—

০ থেকে ৫০ একিউআইকে “ভালো” হিসেবে ধরা হয়।
৫১ থেকে ১০০ “মাঝারি” মানের বায়ু।
১০১ থেকে ১৫০ স্কোর “সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর।”
১৫১ থেকে ২০০ হলে বায়ু “অস্বাস্থ্যকর।”
২০১ থেকে ৩০০ স্কোরকে বলা হয় “খুব অস্বাস্থ্যকর।”
আর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে হলে সেটি “অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ” পর্যায়, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বর্তমান বায়ুমান মূলত যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা, নির্মাণকাজের ধুলা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে দ্রুত খারাপ হচ্ছে। মৌসুমি পরিবর্তন ও বৃষ্টির অভাবও এতে ভূমিকা রাখছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এমন মাত্রার বায়ুদূষণ দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের সংক্রমণ, হৃদরোগ ও চোখের সমস্যা বাড়ায়। শিশু, বয়স্ক ও আগে থেকেই অসুস্থ মানুষদের জন্য এ পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহনাজ রহমান বলেন, “বায়ুদূষণের এই মাত্রা যদি কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকে, তাহলে হাসপাতালগুলোতে শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগীর সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এখনই নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

উন্নতির পর ফের অবনতি

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ঢাকার বায়ু কিছুটা পরিশুদ্ধ হয়েছিল। তখন রাজধানী একিউআই তালিকায় ২৫-৩০তম স্থানে ছিল। কিন্তু অক্টোবরের শুরুতেই আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে আসায় এবং নির্মাণকাজের ধুলাবালি বেড়ে যাওয়ায় ফের পরিস্থিতির অবনতি হয়।

বায়ুমান উন্নত করতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনগুলোকে নিয়মিত সড়ক পরিষ্কার, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, এবং যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে কঠোর ভূমিকা নিতে বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন।

সতর্কতা ও পরামর্শ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—

সকাল ও সন্ধ্যার দিকে বাইরে দীর্ঘ সময় অবস্থান না করা,
মাস্ক ব্যবহার করা,
জানালা-দরজা বন্ধ রাখা এবং

গাছপালা রোপণ ও যত্ন নেওয়া বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর হিসেবে ঢাকায় বসবাসকারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন বাতাস এখন এক প্রকার বিলাসিতা। তবে শহরের বায়ু উন্নত না হলে ‘স্মার্ট সিটি’ নয়, ‘স্মগ সিটি’তে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

সারাবাংলা/এফএন/ইআ

দূষিত শহর বায়ু দূষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর