Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শাপলা প্রতীক নিয়ে এখনই ‘শেষ সিদ্ধান্ত’ বলতে চান না সিইসি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:২৮ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৫২

চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবি করা শাপলা প্রতীক নিয়ে এখনই ‘শেষ সিদ্ধান্ত’ বলতে চান না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, অপেক্ষা করেন, আপনারা দেখবেন। আমি মনে করি না গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে এনসিপি কোনো সমস্যা হবে।

রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের সিইসি এসব কথা বলেন।

এনসিপির শাপলা প্রতীক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, ‘একটা প্রতীকের বিষয় আসছে। আমাদের ইলেকশন কমিশনের সচিব মহোদয় অলরেডি এক্সপ্লেইন করেছেন যে, কোনো দল নিবন্ধন যখন পায়, আমাদের প্রতীকের নির্ধারিত তালিকা আছে, ওখান থেকে তাদের প্রতীক নিতে হয়। এনসিপির প্রতীকের (শাপলা) কথা বলেছেন, এটা যেহেতু আমাদের নির্ধারিত তালিকায় নেই, এজন্য এটা আমরা দিতে পারিনি। যেহেতু আমাদের তালিকাভুক্ত নয়, এজন্য আমরা দিতে পারিনি। বিধান হল, আমাদের তালিকাভুক্ত যেসব প্রতীক আছে, ওখান থেকেই নিতে হবে। এখন পর্যন্ত তালিকার বাইরে আমরা কাউকে দিইনি।’

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন কমিশন যে কোনোসময় তাদের তালিকায় প্রতীকের সংখ্যা বাড়াতে-কমাতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের তালিকায় তো ১১৫টা প্রতীক ছিল না, এটা তো আমরা পরে করেছি। কারণ এখন লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন আর ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন এক করে ফেলেছি। এ জন্য আমাদের প্রতীকের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’

তাহলে শাপলা নিয়ে শেষ সিদ্ধান্ত কী, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমি এখন বলতে চাই না, আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে রাজনীতিবিদরা জানেন। বিশেষ করে এনসিপি নেতারা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। আমি কোনো শঙ্কিত নই, ইলেকশনে পার্টিসিপেশনের বিষয়ে আমি পুরোপুরি কনফিডেন্ট। আপনারা ওয়েট করেন, আপনারা দেখবেন। শাপলা প্রতীক নিয়ে এখনই কোনো জবাব আমি দিতে চাই না। এটা নিয়ে কমিশনে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

প্রতীক নিয়ে এনসিপির অনড় অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘দেখেন, এনসিপির বিষয়টা, একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের ফিলিংস যেটা, আরও কয়েকবার বলেছি এটা, যারা এনসিপিতে নেতৃত্বে আছেন এখন, আমরা বাহ্যত যাদের দেখি আর কী, আমাদের সাথে যারা মিটিং করতে আসেন, তারা কিন্তু ২০২৪ এর আন্দোলনে একটিভলি ইনভলব ছিলেন, এমন লোকজনই কিন্তু এ দলটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা গণতন্ত্রায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন, এটা আমি মনে করি না। আমি তাদের কোনো অংশেই কম দেশপ্রেমিক ভাবতে চাই না। না হলে তারা এরকম জান দেওয়ার জন্য রাস্তায় নামতেন না।’

‘যারা এনসিপিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা অনেক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই অভ্যুত্থানে যোগদান করেছিল, একটিভলি ইনভলব হয়েছিল। সুতরাং তারাও দেশের মঙ্গল চান, তারাও দেশের ভালো চান, তারাও দেশের গণতন্ত্র চান, আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রের উত্তরণটা যাতে সুন্দর হয়, সুষ্ঠু হয়, এরকম একটা পরিবেশের জন্য উনারা সম্মতি দেবেন।’

রাজনীতিবিদদের কাছে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ বলে কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এরকম রাজনৈতিক সংকট বিভিন্নসময় হয়। রাজনীতিবিদদের একটা সুবিধা আছে, দেয়ার ইজ নো লাস্ট ওয়ার্নিং বলে পলিটিক্সে তারা পজিশন চেঞ্জ করতে পারেন, এটা আমরা পারি না। আমাদের তো আইনকানুন মেনে অনেককিছু করতে হয়, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সুতরাং এটা উনারা বলতেই পারেন, কিন্তু আমরা উনাদের দেশপ্রেমিক হিসেবেই জানি, দেশের মঙ্গল কামনাকারী হিসেবে জানি, তারা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং দেখবেন তারা একটা অবস্থানে আসবেন।’

‘আমি মনে করি না গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এনসিপি কোনো সমস্যা হবে। তারা গণতন্ত্রায়নের পথে বাধা হয়ে আসবে, এটা আমি মনে করি না অন্ততঃ। নিজের জীবন বাজি রেখে অভ্যুত্থানে যারা জড়িত ছিল, তারা এ ধরনের কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। সুতরাং দেখবেন তারা একটা অবস্থানে আসবেন এবং সবাই একটা সুন্দর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’

রাতের অন্ধকারে নির্বাচন দিতে চাই না

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গোপন-রাতের অন্ধকারের নির্বাচন তারা করতে চান না। একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে আগ্রহী নির্বাচন কমিশন।

সিইসি বলেন, আমরা একটি স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই, গোপন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না, রাতের অন্ধকারে কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। আমরা চাই এমন একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নির্বাচন, যা সবাই নিজের চোখে দেখতে পারে। একটা জিনিস ধরে রাখেন, আমাদের নিয়তের মধ্যে কোনো গলদ নেই। আমরা অতি স্বচ্ছ একটি নির্বাচন চাই। সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করতে চাই না। বরং আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই, পার্টনার হিসেবে পাশে পেতে চাই।’

‘সিইসি হিসেবে যেমন আমার দায়িত্ব আছে, আপনাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, এখানেও আপনাদেরও অবদান রাখতে হবে। আমি যেমন সিইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি, তেমনি নাগরিক হিসেবেও আমাদের সবার একটি দায়িত্ব আছে। আমি আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি এবং পাশে পেতে চাই।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই এবং ভোটারদের জন্য এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে প্রতিটি বাংলাদেশি ভোট দিতে পারে। প্রবাসে যারা আছেন, তাদের জন্যও আমরা ভোটের ব্যালটের ব্যবস্থা করেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই ভোট দিতে পারেন না— এটা কেমন কথা! তিনি ভোট সংগ্রহ করবেন, কিন্তু দিতে পারবেন না, এটা তো যুক্তিসঙ্গত নয়। এবার আমরা ভোট দেওয়ার সেই সুযোগের ব্যবস্থা করছি।’

সত্য-মিথ্যা যাচাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন আপনারা আমাদের সম্পর্কে প্রচার বা অপপ্রচার যা শুনবেন, দয়া করে আগে ফ্যাক্ট চেক করে নেবেন। আমরা এজন্য একটি ফ্যাক্ট চেক সেল গঠন করছি। যাতে তথ্য পেলে আগে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়। সত্য হলে প্রচার করবেন।’

চট্টগ্রামের ভোটের পরিবেশ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ভোটের ইতিহাস বদলাতে চাই। আগের মতো যেন না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমি এখানে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। ইনশাল্লাহ আগের মতো হবে না। আমি সাংবাদিকদের পূর্ণ সহযোগিতা চাই। আমরা এই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই, যাতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সুন্দরভাবে নিজের ভোট দিতে পারে নিরাপদ পরিবেশে। যাতে নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার হতে না পারে, সেই লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়, এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই-এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই। আমি চাই, তথ্য প্রবাহ বজায় থাকুক। আমরা চাই একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে। লুকানো কোনো নির্বাচন দিতে চাই না, রাতের অন্ধকারের ভোট চাই না। আমরা চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সবার দৃষ্টিগোচর হয় এমন নির্বাচন।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমদ।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার শাপলা প্রতীক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর