নওগাঁ: নওগাঁ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে। তবে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে এখনো চালু করা যায়নি প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বর্জ্য পরিশোধনাগারটি। এতে শহরের বর্জ্য ল্যান্ডফিলটির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হচ্ছে। যার ফলে পরিবেশ দূষণ যেমনি হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পের ডিজাইনে ত্রুটির কারণে প্রকল্পটি তিন বছরেও চালু করা যায়নি। প্রকল্পটির ডিজাইনে পঁচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার কোনো পদ্ধতি বা যান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় এখনো বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়নি। তাই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এরইমধ্যে স্থাপন করা মেশিন-সরঞ্জামাদি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নওগাঁর পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্পটির অবস্থান শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কোমাইগাড়ী এলাকায় ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কের পাশে। প্রকল্প অবকাঠামো নির্মাণের আগেও ওই স্থানেই শহরের বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হতো। প্রকল্পটি চালু করা না যাওয়ায় ল্যান্ডফিলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে এখনো বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াচ্ছে, আশপাশের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় নওগাঁ শহরজুড়ে অপরিকল্পিত ময়লার ভাগাড় আর দুর্গন্ধ সমস্যার সমাধানের জন্য ২০১৮ সালে স্যাানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০২০ সালে ৩০ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করে নওগাঁ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
দরপত্র বাছাই শেষে ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। শহরের কোমাইগাড়ী এলাকায় পৌরসভার ময়লার ভাগাড়ের পাশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৌরসভাকে কাজটি বুঝিয়ে দেয় ওই বছরের আগস্ট মাসে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটি চালু করতে পারেনি পৌর র্কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এখানে স্থাপিত যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হলে শহরের বাসা-বাড়ির বর্জ্য ব্যবহার করে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
সরজমিনে কোমাইগাড়ী এলাকায় স্থাপিত স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ল্যান্ডফিলের পাশে একটি উন্মুক্ত স্থানে শহরের বাসা-বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং এলাকায় কয়েকজন শমিককে কাজ করতে দেখা যায়। ওই শ্রমিকরা জানান, এই ল্যান্ডফিল যখন তৈরি হচ্ছিলো তখন শহরের ময়লা বালুডাঙ্গা বাসস্টান্ড এলাকার একটা ভাগাড়ে ফেলা হতো।
ল্যান্ডফিল তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পরেও শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় ময়লা ফেলা হচ্ছিলো। কিন্তু, স্থানীয়রা বালুডাঙ্গা স্থান থেকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নিতে চাপ দিলে পৌর কর্তৃপক্ষ আবার কোমাইগাড়ী এলাকায় ল্যান্ডফিলের পাশে ময়লা ফেলতে নির্দেশনা দেয়। এখন সেখানেই ময়লা ফেলা হচ্ছে।
শহরের কোমাইগাড়ী এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল বলেন, ‘ময়লার ভাগাড়ের পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষার জন্য আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে জানি না এখনো বর্জ্য পরিশোধনাগারটি চালু করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রকেল্পর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। এখনো পরিশোধনাগারটির পাশে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং আশপাশের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত যতটা দ্রুত সম্ভব এই প্রকল্পটি চালু করা।
নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটি শেষ হওয়ার পর একটা বড় ত্রুটি ধরা পড়েছে। এ ধরণের প্রকল্প নতুন হওয়ায় কারিগরি বিষয়ে কিংবা প্রকল্পের ডিজাইন সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারণা ছিল না। প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ডিজাইনে ত্রুটির বিষয়টি আমাদের কাছে ধরা পড়ে। এই প্রকল্পে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার যান্ত্রিক কোনো পদ্ধতি নেই। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করতে গেলে নতুন অবকাঠামো দরকার। সেটা করার জন্য ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেই টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার বাছাই করে কাজ শুরু করা হবে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এই প্রকল্পটি চালু করা সম্ভব হবে তা এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না।’