Sunday 12 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বামীকে খুন করে ফেলে দেয় খালে, মরদেহের খোঁজে পিবিআই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২৫ ২০:৪৫

নিহত দিদার আলম। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বামীকে গরম দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে স্ত্রী। এর পর অঝোর বর্ষণের রাতে স্ত্রীসহ তিনজন মিলে মরদেহ নিয়ে ফেলে খালে। বৃষ্টিতে পানির তীব্র স্রোতে লাশ মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যায়। সাড়ে চার মাস আগের এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এখন সেই লাশের সন্ধানে হন্যে হয়ে ছুটছে।

পিবিআই জানিয়েছে, প্রথমে নিহত ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছিল। এরপর আদালতে অপহরণের মামলা করা হয়। ওই মামলা তদন্তে নেমে পিবিআই স্ত্রীসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর জানতে পেরেছে পরকীয়ার জেরে পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের কথা।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে রাতে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা থানার পশ্চিম কোদালা গ্রামে। আর মামলাটি তদন্ত করছে চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই।

নিহত দিদার আলম (২৮) ওই গ্রামের বাসিন্দা, তিনি কৃষিকাজ করতেন। তাকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া চারজন হলেন- নিহত দিদারের স্ত্রী কোহিনুর আক্তার (২৭), আব্দুল খালেক (৩০), মো. হানজালা (২৬) এবং মো. সেলিম (২৮)। তাদের বাড়িও পশ্চিম কোদালা গ্রামে।

পিবিআই জানায়, গত ২ জুন দিদারের বাবা জামির হোসেন চন্দ্রঘোনা থানায় তার ছেলে নিখোঁজের বিষয়ে জিডি করেন। এতে তিনি ৩১ মে থেকে তার ছেলের কোনো খোঁজ মিলছে না বলে উল্লেখ করেন। প্রায় দুই মাসেও ছেলের হদিস না পেয়ে গত ২৭ জুলাই তিনি ওই চারজনকে আসামি করে আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেন। আদালত মামলার আবেদন সরাসরি এজাহার হিসেবে নিয়ে চন্দ্রঘোনা থানাকে তদন্তের আদেশ দেন। এর পরও প্রায় দুই মাসে কোনো অগ্রগতি না দেখে তিনি পিবিআইয়ের মাধ্যমে মামলা তদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে গত ২ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম জেলা পিবিআই। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে ৪ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে কোহিনুর ও খালেককে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় কোহিনুর হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন এবং হানজালা ও সেলিমের নাম প্রকাশ করেন।

এরপর গত ৯ অক্টোবর কোহিনুর আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১১ অক্টোবর) রাতে হানজালা ও সেলিমকে পিবিআই টিম পশ্চিম কোদালা থেকে গ্রেফতার করে। তারা আজ রোববার (১২ অক্টোবর) আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেফতার তিনজনের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিদার খুবই সাধারণ, খেটে খাওয়া একজন কৃষক। তার স্ত্রী কোহিনুরের সঙ্গে খালেকের ঘটনার আগে অন্তত ছয় মাস ধরে এবং হানজালার সঙ্গে তিন বছর ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। ঘটনার আগে একদিন দিদার ঘরে এসে কোহিনুর ও খালেককে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলেন। এরপর দিদার তার স্ত্রীকে মারধর করেন।’

‘কোহিনুর এ ঘটনা প্রথমে খালেক এবং পরে হানজালাকে জানায়। খালেক এ নিয়ে দিদারের সঙ্গে কয়েক দফা ঝগড়া করে ও তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। অন্যদিকে হানজালা দিদারকে মেরে ফেলার পরামর্শ দিয়ে কোহিনুরকে পাঁচটি ঘুমের ওষুধ কিনে এনে দেয়। ৩০ মে রাতে দিদারকে গরম দুধের সঙ্গে চারটি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রায় অচেতন করে ফেলে কোহিনুর। এরপর স্বামীর বুকের ওপর উঠে নাকে-মুখে বালিশ চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।’

পিবিআই কর্মকর্তা রুহুল আমিনের তথ্যানুযায়ী, কোহিনুর যখন তার স্বামীকে খুন করছিল, তখন হানজালা ও তার বন্ধু সেলিম ওই বাড়ির পাশে পশ্চিম কোদালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে লুডু খেলছিল। মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে রাত ২টার দিকে ছাতা ও টর্চলাইট নিয়ে কোহিনুর তাদের কাছে আসে। এর পর তিনজন মিলে বাড়িতে গিয়ে দিদারের লাশ ধান শুকানোর প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে অদূরে কোদালা খালে ফেলে দেয়। বৃষ্টির কারণে তখন খালে পানির তীব্র স্রোত ছিল। স্রোতের মধ্যে মরদেহ মুহূর্তেই ভেসে যায়।

তিনি বলেন, ‘মূল হত্যাকাণ্ডে জড়িত কোহিনুর। খুনের পরিকল্পনা করেছিল হানজালা। আর তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেলিমসহ তিনজন মিলে মরদেহ গুমের উদ্দেশ্যে কোদালা খালে ফেলে দেয়। আমরা মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছি। যদিও চার মাস পার হয়ে গেছে, মরদেহ আদৌ পাওয়া যাবে কী না জানি না। পাওয়া গেলে তাদের বক্তব্য সঠিক কী না সেটা প্রমাণ হবে।’

গ্রেফতার খালেক সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন। তবে দিদারকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল বলে কোহিনুরের জবানবন্দিতে উঠে আসে। আর তাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হওয়ায় খালেককেও অভিযোগপত্রে আসামি করার সম্ভাবনা আছে বলে জানান পিবিআই পরিদর্শক রুহুল আমিন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর