ঢাকা: বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী বা খেলোয়াড়দের জন্য একটি ‘ভালো উৎপাদন কেন্দ্র’ হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে, যার মধ্যে ভারতীয়ারাও রয়েছেন। এছাড়া, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অস্থায়ী পর্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করে ব্যবসা কিছুটা ‘আগের মতো ভালো নয়’ বলে মত দিয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। তবে তারা সবসময় বাংলাদেশকে তাদের ‘বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত’ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এবং ভারতের পক্ষ থেকে এখনো সেই ইতিবাচক মনোভাব অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
বাজাজ ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড, ওরিয়েন্ট ইলেকট্রিক এবং রেমন্ড লিমিটেডের সম্পৃক্ততার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দুর্গেশ বক্সী মুম্বাইয়ের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিতে (সিআইআই) তে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে এমন মন্তব্য করেন। এ সময় ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সিকিউরিটি সলিউশনসের সুরোজিৎ ব্যানার্জি ভারতের উচ্চ প্রবৃদ্ধির সাফল্যের গল্প এবং ভারত কীভাবে সিইও তৈরির কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে তা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে দুর্গেশ বলেন, ‘আমরা সর্বদা বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেছি এবং এটি অনেক ভারতীয় উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছে।’
কথোপকথনের সময় শক্তি, কৌতূহল এবং উষ্ণতার প্রশংসা করে ব্যবসায়ী নেতা বলেন, তারা নিশ্চিতভাবে মনে করেন যে, বাংলাদেশ-ভারত কেবল সীমান্ত নয়, অনেক বেশি কিছু ভাগ করে নেয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা- সর্বোপরি বছরের পর বছর ধরে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে বোনা। সিআইআইতে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই ধরনের মিথষ্ক্রিয়াগুলোই সংলাপ, বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃত অংশীদারিত্ব শুরু করে।’
দুর্গেশ বলেন, ‘সিআইআই সর্বদা সরকার, শিল্প ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের একত্রিত করে নতুন সুযোগ অন্বেষণের জন্য কাজ করে আসছে। আজকের এই বিনিময় কেবল ব্যবসায়িক সম্পর্কই নয়, বরং মানুষের মধ্যে আস্থা ও বোঝাপড়া গড়ে তোলার চেতনার প্রতিফলন।’ এবং তারা চতুর্থ রাষ্ট্রস্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যমের ভূমিকাকে স্বীকার ও সম্মান করেন বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সামনের দিকে তাকাই। কারণ, আমরা মনে করি, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আরও গভীরভাবে সহযোগিতার জন্য অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে।’ আর এ জন্য নিয়মিত সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন দুর্গেশ।
ভিসাসংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভিসা ব্যবস্থা শিথিল করার পরামর্শ ছিল। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে নো ম্যানস ল্যান্ডে একটি অফিস থাকা উচিত। যেখানে উভয় দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আসতে পারবেন, আলোচনা করতে পারেন, তাদের নমুনা নিয়ে আসতে পারেন এবং তার পর মূল্য চূড়ান্ত করতে পারেন।’
ব্যবসায়ী নেতারা দুটি দেশের সাংস্কৃতিক সম্মানের প্রশংসা করেন এবং স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশও অত্যন্ত ধারাবাহিক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পে। ব্যবসায়ীরা বলেন, এখন সময় একে অপরের সঙ্গে হাত মেলানোর, একে অপরের ব্যবসায়িক স্বার্থকে সম্মান করার। এতে উভয় দেশ লাভবান হবে।
তারা বিশ্বাস করেন, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী বা খেলোয়াড়দের জন্য বাংলাদেশ একটি ভালো উৎপাদন কেন্দ্র। সেখানে ভারতও আছে। আর ভারত চায়, এর মাধ্যমে ভারতীয় ব্যবসা বৃহত্তর স্তরে নিয়ে যেতে। এ বিষয়ে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠকের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।