চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ১৮ দিনের প্রচার শেষ করে ভোটের আগেরদিন পর্যন্ত দৃশ্যত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ‘পালটাপালটি’ থাকলেও সেটা নির্বাচনের পরিবেশ অশান্ত করেনি। তবে নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করে বিতর্কহীনভাবে ফলাফল ঘোষণা করতে পারবে কী না, তা নিয়ে উদ্বেগ আছে প্রার্থীদের মধ্যে।
৩৫ বছর পর বুধবার (১৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট হবে। সোমবার (১৩ অক্টাবর) নির্বাচনি প্রচারের শেষদিন পার করে মঙ্গলবার (১৪ অক্টাবর) প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নিজেদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আছেন। রাত পোহালেই ভোট, তাই নির্বাচনি লড়াই নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে পার করছেন প্রার্থীরা।
চাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে মোট ১৩টি প্যানেল। এর মধ্যে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্রদলের স্বনামে দেওয়া প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্টের ‘দ্রোহ পর্ষদ’ এবং বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেল নিয়ে আলোচনা বেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
ভোটের আগেরদিন নির্বাচন ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক দেখছি। তবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা দাবি জানিয়েছি রাতের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করার। তাছাড়া আমরা ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠনের কথা বলেছিলাম। নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী শাফায়াত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ঠিক আছে। তবে আগামীকাল (বুধবার) যেন কোনো ঝামেলা সৃষ্টি না হয়, সেটি প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।’
নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে নির্বাচন কমিশন কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে দ্রোহ পর্ষদ। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দ্রোহ পর্ষদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ইফাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমন নির্লিপ্ততা আমাদের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। এছাড়া সার্বিক পরিবেশ ভালো মনে হচ্ছে।’
জানতে চাইলে চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, তাদের ব্যাখ্যা নেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।’
চাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ সাহিত্য সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দফতর সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ দফতর সম্পাদক পদে ১৪ জন, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহ ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক পদে ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ২০ জন, স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক পদে ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে ৯ জন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ২০ জন এবং পাঁচটি নির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৮৫ জন।
আর হল সংসদ নির্বাচনে ৯টি ছাত্র হলে ৩৫০ জন বিভিন্ন পদে লড়বেন। পাঁচটি ছাত্রী হলে বিভিন্ন পদে লড়বেন ১২৩ জন। শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলে বিভিন্ন পদে লড়বেন ২০ জন প্রার্থী।