Wednesday 15 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আসছে ‘জিনিয়া’ অ্যাপ
এক ক্লিকেই মিলবে পুলিশি সেবা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৬ অক্টোবর ২০২৫ ০০:০৪

জিনিয়া অ্যাপ। ছবি: সংগৃহীত

সিলেট: পুলিশি সেবায় নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে সিলেটে। এখন থেকে এক ক্লিকেই নাগরিকরা পাবেন তাৎক্ষণিক পুলিশি সহায়তা, অভিযোগ জানাতে পারবেন অনলাইনে, এমনকি জরুরি অবস্থায় কাছাকাছি থানার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও হবে মুহূর্তেই! এই যুগান্তকারী পরিবর্তনের নাম ‘জিনিয়া (GenieA)’— প্রযুক্তিনির্ভর পুলিশি সেবা অ্যাপ। আর এই অ্যাপটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১৬ অক্টোবর। এদিন বেলা ১১টায় জেলার মোগলাবাজার থানার মখদ্দছ কমিউনিটি সেন্টারে অ্যাপটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজ-উন-নবী। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী, পিপিএম।

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রশাসনিক সেবা। এবার সেই অগ্রযাত্রায় যুক্ত হচ্ছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ‘GenieA’ (জিনিয়া) নামের এক নতুন পুলিশি সেবা অ্যাপ, যা সাধারণ মানুষকে আরও দ্রুত, সহজ ও স্বচ্ছ সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি।

‘জিনিয়া’ অ্যাপ: পুলিশের ডিজিটাল সহকারী

‘GenieA’ (উচ্চারণ: জিনিয়া) হলো এমন একটি মোবাইল অ্যাপ, যা নাগরিক ও পুলিশের মধ্যে সরাসরি, দ্রুত এবং প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই থানার সহায়তা চাইতে পারবেন, অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন, এমনকি জরুরি অবস্থায় লাইভ লোকেশনও পাঠাতে পারবেন।

‘জিনিয়া’ কী এবং কেন

‘GenieA’ নামের মধ্যেই আছে নতুনত্ব। ‘Genie’ অর্থাৎ একধরনের ‘সহকারী’, যে মুহূর্তেই সাহায্যে হাজির হয়। ঠিক তেমনভাবেই এই অ্যাপটি নাগরিকের ডিজিটাল সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে একজন নাগরিক মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই পুলিশি সহায়তা পাবেন, কোনো ফোন কল ছাড়াই।

অ্যাপটির মূল লক্ষ্য হলো, নাগরিক ও পুলিশের মধ্যে সরাসরি, দ্রুত যোগাযোগ তৈরি করা, জরুরি অবস্থায় সাহায্য চাওয়ার সময় কমিয়ে আনা, অনলাইন অভিযোগ গ্রহণ ও ট্র্যাকিং সুবিধা দেওয়া এবং পুলিশের সেবা ব্যবস্থাকে আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বচ্ছ করা।

অ্যাপটির উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো

  • জরুরি SOS বাটন: এক ক্লিকে ব্যবহারকারী নিকটস্থ থানায় সাহায্য সংকেত পাঠাতে পারবেন।
  • লাইভ লোকেশন শেয়ারিং: পুলিশ ব্যবহারকারীর অবস্থান তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে পাবে, ফলে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে।
  • অভিযোগ দাখিল (Online FIR): নাগরিকরা সরাসরি অ্যাপ থেকেই অভিযোগ করতে পারবেন, যা থানা কর্তৃপক্ষ রিয়েল টাইমে গ্রহণ করবে।
  • নারী নিরাপত্তা সেকশন: নারীদের জন্য আলাদা হেল্পলাইন ও নিরাপত্তা সেবা যুক্ত থাকবে।
  • ফিডব্যাক ও ট্র্যাকিং: সেবা পাওয়ার পর ব্যবহারকারী তার অভিজ্ঞতা জানাতে পারবেন, এতে জবাবদিহিতা বাড়বে।
  • ডিজিটাল হেল্প ডেস্ক: হারানো জিনিস, ট্রাফিক সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা, ভিসা বা পাসপোর্টে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স—সবই করা যাবে অ্যাপের মাধ্যমেই।

সিলেটেই কেন ‘জিনিয়া’ প্রকল্প

সিলেটের পুলিশ প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা কার্যক্রমে এগিয়ে। মোগলাবাজার থানা সেই ধারাবাহিকতার অংশ। এখানে আগে থেকেই অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থা, ই-ডায়েরি ও থানার ডিজিটাল রেকর্ড চালু আছে। জানানো হয়েছে, ‘GenieA’ অ্যাপের পাইলট প্রকল্প হিসেবেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে এটি শুরু হচ্ছে। পরীক্ষামূলকভাবে সফল হলে পরবর্তী সময়ে এটি দেশের সব থানায় চালু করা হবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা চাই নাগরিকরা যেন পুলিশকে ভয় নয়, ভরসা হিসেবে দেখে। জিনিয়া সেই বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের একটি ডিজিটাল উদ্যোগ।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী, পিপিএম, বলেন ‘এটা শুধু একটি অ্যাপ নয়, এটি পুলিশের সেবা ব্যবস্থার রূপান্তর। আমরা চাই, নাগরিকরা থানায় না গিয়েও যেন সেবা পান। জিনিয়া অ্যাপ সেই দিকেই প্রথম বড় পদক্ষেপ।’

তিনি আরও জানান, অ্যাপটির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা আরও দক্ষ হন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রস্তুতি

মোগলাবাজার থানা ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। অনুষ্ঠানে সিলেট জেলার বিভিন্ন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবকরা উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানস্থল মখদ্দছ কমিউনিটি সেন্টার সাজানো হচ্ছে প্রযুক্তি প্রদর্শনীকেন্দ্র হিসেবে— সেখানে অ্যাপের লাইভ ডেমো দেখানো হবে, যাতে সাধারণ মানুষও ব্যবহার পদ্ধতি বুঝতে পারেন।

অনলাইনে আলোচনার ঝড়

অ্যাপটির নাম ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে আলোচনার ঝড়। ‘GenieA’ শব্দটি ফেসবুকে এরই মধ্যে ভাইরাল হ্যাশট্যাগে (#GenieA, #SmartPoliceSylhet) পরিণত হয়েছে। অনেকে বলছেন, ‘এটা যদি সত্যি কাজ করে, তাহলে বাংলাদেশে পুলিশের ভাবমূর্তি আমূল বদলে যাবে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অ্যাপটি সফল হলে পরবর্তী ধাপে এতে যুক্ত করা হবে ‘AI Chatbot’, যা নাগরিকের অভিযোগ বিশ্লেষণ করে সঠিক ইউনিটে পাঠাবে, ড্রোন সহায়তা ফিচার, বিশেষ করে দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দ্রুত রেসপন্সের জন্য এবং জাতীয় সেবা প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযোগ, যাতে নাগরিক সেবার একক হাব তৈরি হয়।

নাগরিকদের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় নাগরিক ফারজানা আহমেদ বলেন, ‘পুলিশি সহায়তা নিতে গেলে অনেক সময় ঝামেলা হয়। যদি অ্যাপের মাধ্যমে সব করা যায়, তাহলে সেটা হবে বিশাল স্বস্তি।’ অন্যদিকে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন দোকানে চুরি বা ঝামেলা হলে ফোনে লাইন পাওয়া যায় না। এক ক্লিকে পুলিশ আসবে— এটা শুনে বেশ আশাবাদী।’

‘জিনিয়া’ অ্যাপ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সিলেট জেলায় শুরু হতে যাচ্ছে পুলিশের ডিজিটাল রূপান্তরের নতুন অধ্যায়। এটি কেবল একটি অ্যাপ নয়, বরং ‘জনগণের কাছে পুলিশ’ পৌঁছে দেওয়ার এক আধুনিক সেতুবন্ধন। যদি এই প্রকল্প সফল হয়, তাহলে সেটি হবে বাংলাদেশের পুলিশ ব্যবস্থার জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর