ঢাকা: নানা উদ্যোগের পর দেশে ডলারের খরা কাটায় আমদানির জন্য আরোপিত কড়াকড়ি শর্ত পর্যায়ক্রমে শিথিল করা হচ্ছে। এতে ভোগ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামালসহ সাম্রগিক আমদানি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জুলাই-আগস্ট সময়ে সামগ্রিক আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমান দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
একইভাবে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জুলাই-আগস্টে এলসি নিষ্পত্তির পরিমান দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০ দশমিক ৬৭ বিরিযন ডলার। ফলে আমদানির জন্য এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে প্রায় সোয়া ৮ শতাংশ এবং সোয়া ৪ শতাংশ। মূলত ডলারের খরা কাটায় আমদানি বিল খোলা এবং নিষ্পত্তি উভয়ই বেড়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯৯০ মিলিয়ন ডলার। যা একই সময়ে গত অর্থবছরে ছিল ৯০৭ মিলিয়ন ডলার। এখানে বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ভোগ্যপণের আমদানি বিল নিষ্পত্তি হয়েছে ৯২০মিলিয়ন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৫৩ মিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
এদিকে কারখানার মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য চলতি এবার এলসি খোলা হয়েছে ২৬৪ মিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) একই সময়ে ছিল ২৬২ মিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০৯ মিলিয়ন ডলার। যা একই সময়ে আগের বছর ছিল ৩৫১ মিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে এলসি নিষ্পত্তি হ্রাসের হার ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. এজাজুল ইসলাম বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারের ডলার সংকট দেখা দেয়। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তখন ডলার সাশ্রয়ে বিলাসপণ্য ও বিদেশগমনসহ কিছু পণ্যের এলসি খোলাতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হয়। এতে আমদানিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিন্তু সম্প্রতি দেশে ডলার সংকট কেটেছে। ব্যাংকগুলেরা কাছে আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে। সেজন্য আমদানির শর্ত শিথিল করা হয়। এর ফলে ব্যবসায়ীরা বেশি পণ্য আমদানি করছেন। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, কাঁচামাল, শিল্পের কাঁচামাল এবং সরকারি সার আমদানির জন্য এলসি খোলা বেড়েছে। মূলত ডলার খরা কাটায় চলতি অর্থবছরে সামগ্রিক আমদানি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৬৬৬ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার। এখানে পবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে এলসি নিস্পত্তি হয়েছে ৬৩২ মিরিয়ন ডলার। যা আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ছিল ৭০০ মিলিয়ন ডলার। এক বছরে নেতিবাচিক প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।
এদিকে চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে পেট্রোলিয়ম পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার। যা তার আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৩৯৪ মিলিয়ন ডলার। এখানে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আর পেট্রোলিয়াম পণ্য চলতি বছরের জুলাই-আগেস্টে ছিল ১ হাজার ৪৪২ মিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৮৪ মিলিয়ন ডলার। এখানে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে অন্যান্য পণ্যের আমদানি খোলার হার বেড়ছে ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং নিষ্পত্তিতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিসহ সামগ্রিক আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এটি শিল্প খাতের জন্য ইতিবাচক দিক। মূলত পর্যাপ্ত ডলার থাকায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদিন করছেন। যা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায় করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ছয় হাজার ৮৩৫ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৬৭২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে আমদানি বেড়েছে ১৬৩ কোটি ডলার। যা হিসাব করলে দাঁড়ায় শতকরা হিসাবে ২ দশমিক ৪৪। যদিও ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছর যেখানে আমদানি কমেছিল ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।
জানা গেছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ মাস পর গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। আর ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় মঙ্গলবার বাজার থেকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার ক্রয় করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮২ বিলিযন ডলার। তবে ২০২৪ সারের আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় জুলাই শেষে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। আর দেশের ইতিহাসে ২০২১ সালের আগস্টে রেকর্ড রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার।