ফরিদপুর: দেশের কল্যানে নিজ দেহটিও দান করে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পুরস্কার ভূষিত বীর উত্তম ক্যাপ্টেন (অবঃ) সাহাবুদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দেশপ্রেমিক সাহাবউদ্দিনের দেহটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করা হয়। ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে নিজেই তার দেহদানের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গিয়েছিলেন।
তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে দশটার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। সাহাবউদ্দিনের ছেলে ক্যাপ্টেন তাপস আহম্মেদ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দিলরুবা জেবার কাছে তার বাবার মরদেহটি হস্তান্তর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দিলরুবা জেবা।
এসময় সেখানে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি করিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, ব্লাষ্ট ফরিদপুরের সমন্বয়ক ও মানবধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী, সাহাবউদ্দিনের পরিবারের অন্যান্য সদস্য স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের শতাধিক শিক্ষার্থী এই বীরের দেহ গ্রহন করতে ও তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন আহমেদের দেহদানের বিষয়ে ফরিদপুর মেডিকলে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. দিলরুবা জেবা বলেন, ‘জাতির এই বীর সন্তানকে নিয়ে ফরিদপুরবাসী গর্বিত। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এই মানুষটির প্রতি কৃতজ্ঞতা এই জন্য যে, সবশেষ তিনি দেশের জন্য তার দেহটিও দান করে গেছেন। আমরা তার মরদেহ গ্রহণ করেছি। এতে শিক্ষার্থীদের গবেষনা ও অধ্যায়নে উপকারে আসবে।’
মুক্তিযুদ্ধের অপারেশন কিলোফ্লাইটের অন্যতম বৈমানিক ক্যাপ্টেন (অব.) সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সকাল ৮টার দিকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। সাহাবুদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৫টায় মহামন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, বিমানবাহিনীসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাদ আসর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বাশারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর তার মরদেহ নিজ জেলা ফরিদপুর শহরে নিয়ে আসা হয়। রাত ১০টার দিকে দেহদানের জন্য তার মরদেহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাহাবউদ্দিন ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর মহল্লার গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ ও লায়লী রশিদ দম্পত্তির সন্তান। তার স্ত্রী রোকেয়া নার্গিসি, এক পুত্র ক্যাপ্টেন তাপস আহম্মেদ ও এক কন্যা ব্যাংক কর্মকর্তা শিপ্রা আহম্মেদসহ পরিবারে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একজন বৈমানিক ছিলেন। অপারেশন কিলোফ্লাইটের সর্বমোট ৮৫টি অপারেশনের মধ্যে ১২টি অপারেশনে ছিলেন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম হামলায় অংশ নেন ৬ ডিসেম্বর। এদিন ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারে নিয়ে সিলেট, মৌলভীবাজার, শেরপুর ও সাদিপুরের দুটি ফেরিঘাটে থাকা পাকিস্তানি অবস্থান ধ্বংস করেন।
৭ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন সাহাবউদ্দিন আহমেদ অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারে করে সিলেটের শমসেরপুরে অপারেশন চালানোর সময় পাল্টা হামলার মুখে পড়েন। তবে তার বুদ্ধিদীপ্ততায় প্রাণে বেঁচে যান মুক্তিযোদ্ধারা। ৮ ডিসেম্বর সিলেট সার্কিট হাউসসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অপারেশন চালান সাহাবউদ্দিন আহমেদ।
সাহাবউদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসরে যান। তিনি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের কমান্ড পাইলট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।