রংপুর: দলীয় প্রতীক বরাদ্দের আগেই ‘শাপলা’ প্রতীকের পোস্টার ছাপিয়ে অবৈধ প্রচারণা চালিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর ৬) আসনের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনোনয়নপ্রত্যাশী তাকিয়া জাহান চৌধুরী। এই বিতর্কিত পদক্ষেপ নির্বাচনী ময়দানে নতুন করে অন্ধকার ছায়া ফেলেছে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, এমন প্রচারণা এই আসনের ভোটারদের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করছে তাই নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
রংপুরের পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও সড়কপথে হঠাৎ করে দেখা গেছে এক নির্বাচনী পোস্টার; যেখানে শাপলা ফুলের প্রতীকসহ এক নারীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ভেন্ডাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই পোস্টারগুলোতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ‘আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৪-রংপুর-৬ পীরগঞ্জ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনয়নপ্রত্যাশী সংসদ সদস্য প্রার্থী (শাপলা মার্কা) তাকিয়া জাহান চৌধুরী আপনাদের সবার সমর্থন ও দোয়া প্রার্থী।’ এমন পোস্টার নির্বাচনি আইনের সীমা লঙ্ঘন করে বিতর্কের ঝড় তুলেছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন এখনো এনসিপিকে ‘শাপলা’ প্রতীক বরাদ্দ করেনি, এমনকি দলটির নিবন্ধনও চূড়ান্ত হয়নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে পরিচিতি পাওয়া তাকিয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে এনসিপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়।
তিনি জানান, দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা তাকে এনসিপির হয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার সাঁটানো নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি দাবি করেন, ‘পোস্টারগুলো আগে ছাপানো হয়েছিল, যখন প্রতীক নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না। এগুলো ভুলক্রমে লাগানো হয়েছে।’
এনসিপির যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘তাকিয়া জাহান চৌধুরী আমাদের দলের একজন সমর্থক কিন্তু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য হননি। মানুষ এনসিপি বলতে এখন অনেকটা শাপলাকে ভেবে নিয়েছে। এখন মানুষ যেখানে এটা গ্রহণ করে নিয়েছে সেখানে আমরা চাইলে নিষেধ করতে পারি না।’
এদিকে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে এই ঘটনা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ীর স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আহমেদ স্বাদ বলেন, ‘শাপলা তো আমাদের মনে জাগায় একটা আশা। কিন্তু এখনো দলকে প্রতীক না দিয়ে এভাবে ব্যবহার করলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। নির্বাচনটা স্বচ্ছ হওয়া উচিত, না হলে ভোট দেওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে যায়।’
অন্যদিকে, উপজেলা সদরের এক ভোটার মেহেদি হাসান বলেন, ‘এটা তো স্পষ্ট অপরাধ। ভুল প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে লোকজনকে ঠকানোর চেষ্টা। এতে রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস কমে যায়।’
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এই ঘটনাকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে দেখছেন। রংপুরের একটি অধিকার সংগঠনের নেতা প্রফেসর হারুন অর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘এটি নির্বাচনী আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। প্রতীক বরাদ্দ না হলে এভাবে ব্যবহার করা অবৈধ প্রচারণা, যা ভোটারদের অধিকার হরণ করে। নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’