রাবি: প্রায় তিন দশক অনুষ্ঠিত হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। তাদের মনোনীত প্যানেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে না পেরে ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের। ভিপি ও এজিএসসহ ২৩টি পদের ২০টিতেই জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। তবে জিএস, ক্রীড়া ও খেলাধুলা বিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে তারা হেরেছে।
আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে রাকসু নির্বাচনের প্রধান কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এই ফলাফল ঘোষণা করে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে প্রতিটি হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। দিনভর পালটাপালটি অভিযোগের মধ্যে বিকেলে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এর সাড়ে চার ঘণ্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা শুরু হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নারী হল দিয়ে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। রাতভর গণনা শেষে আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
শিবিরের প্যানেল থেকে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত যারা
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ) ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। একই পদে নিকটতম ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন (আবীর) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট।
এজিএস পদে জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এস এম সালমান সাব্বির। তিনি পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৭১ ভোট। তার নিকটতম ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জাহিন বিশ্বাস (এষা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট।
এছাড়াও শিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে সহকারী ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক পদে আবু সাঈদ মুহাম্মাদ নুন (সামি), সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে জায়িদ হাসান জোহা, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে সাইয়িদা হাফছা, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে সামিয়া জাহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বি এম নাজমুছ সাকিব, সহকারী তথ্য ও গবেষণা পদে সিফাত আবু সালেহ, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে মো. মুজাহিদুল ইসলাম, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আসাদুল্লাহ গালিব, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে মুজাহিদুল ইসলাম সাঈম, বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদে ইমরান লস্কর এবং সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক পদে মো. নয়ন হোসেন।
পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক পদে মাসুমা ইসরাত। এছাড়া নির্বাহী সদস্যপদের ৪ টিতেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। তারা হলেন মো. দীপ মাহবুব, সুজন চন্দ্র, মো. ইমজিয়াউল হক কামালি ও এ বি এম খালেদ।
শিবির প্যানেলের বাইরে জিতলেন যারা
শিবির প্যানেলের বাইরে শীর্ষ তিন পদের একটি অর্থাৎ জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছে ‘অধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি মোট ভোট পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩৭টি। তার নিকটতম শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৯ ভোট।
এছাড়াও ক্রীড়া ও খেলাধুলা বিষয়ক সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থী ও নার্গিস খাতুন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের একজন খেলোয়ার। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একমাত্র জয় পেয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের বর্তমান সহ সভাপতি।
ফলাফল ঘোষণা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার। শিক্ষার্থীরা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে অনেক খুশি। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা শিক্ষার্থীদের কল্যানে কাজ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
প্রসঙ্গত, এবারের রাকসু নির্বাচনে ১১টি প্যানেলসহ রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭ জন, হল সংসদের ১৫ পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী এবং সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন ও ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।