চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রবেশমূল্য প্রায় পাঁচগুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সবধরনের আমদানি পণ্য পরিবহণ একযোগে বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এতে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য বের হচ্ছে হচ্ছে না, এমনকি রফতানি পণ্য প্রবেশেও ব্যাঘাত ঘটছে। স্বাভাবিক নিয়মে খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরে প্রায় ৪৬ হাজার কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে প্রবেশমূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকরের পর গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে পণ্য পরিবহণ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি চালিয়ে আসছিল চট্টগ্রাম ট্রেইলর মালিক সমিতি। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে বন্দরের পণ্য পরিবহণে যুক্ত বিভিন্ন যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের মোট ১৮টি সংগঠন। তারা পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামে একটি সম্মিলিত মোর্চা গড়ে তুলেছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ঘোষণা দিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার কিংবা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত না নেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলবে। অর্থাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকবে।
নগরীর কদমতলীতে আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহণ সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম ট্রেইলর মালিক সমিতির সভাপতি মোর্শেদ হোসেন নিজামী, চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন, চট্টগ্রাম ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মজুমদার মানিক, চট্টগ্রাম জেলা প্রাইম মুভার ও ট্রেলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়েরসহ মোট ১৮টি সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে সম্প্রতি বিভিন্ন সেবাখাতে ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি কার্যকরের পর বন্দরে যানবাহন প্রবেশের গেট-ফি পাঁচগুণ বেড়ে গেছে। আগে পণ্য পরিবহণকারী প্রতিটি যানবাহনকে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা গেট-ফি দিতে হতো। এখন বাড়িয়ে ২৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে মালিক-শ্রমিক সংগঠগুলো একমত হয়ে পণ্য খালাস বন্ধ রেখেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহণ বন্ধ রেখেছে সম্মিলিত মোর্চা। ছবি: সারাবাংলা
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘এই যে ৫৭ টাকা থেকে ২৩০ টাকা গেট-ফি হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিল, এই টাকাটা কে দেবে? আগে তো এটা ড্রাইভার দিত। কারণ আমাদের এখানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য যেখানে নিয়ে যাওয়া হতো, সেজন্য যে খরচ নির্ধারণ করা হতো, সেই খরচের মধ্যে এই টাকাটা যুক্ত ছিল। এখন ২৩০ টাকা করার ফলে মাসে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। কিন্তু এখন ড্রাইভারেরা ঘোষণা দিয়েছেন, তারা কোনোভাবেই বাড়তি গেট-ফি দেবে না, এই টাকাটা মালিককে দিতে হবে। এটা তো আমাদের পক্ষে বহন করা কঠিন।’
চট্টগ্রাম ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মজুমদার মানিক বলেন, ‘আমরা পণ্য পরিবহণকারী ১৮টা সংগঠন আছি, আমাদের ফেডারেশন আছে। কারও সঙ্গে একবার কথা বলার প্রয়োজন বোধ করল না, হঠাৎ করে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে গেট-ফি হয়ে গেল ২৩০ টাকা। আমাদের পরিবহণের মালিকরা এতে ক্ষুব্ধ, শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ, এমনকি ব্রোকাররাও বলছে এভাবে পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব নয়। সবাই আমাদের চাপ দিচ্ছে প্রতিবাদ করার জন্য। আমরা পণ্য পরিবহণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।’
চট্টগ্রাম ট্রেইলর মালিক সমিতির সভাপতি মোর্শেদ হোসেন নিজামী বলেন, ‘আকস্মিক প্রবেশ-ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আমরা গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছি। এখন আমাদের সঙ্গে সর্বস্তরের মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো একাত্মতা প্রকাশ করে তারাও ধর্মঘট শুরু করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুরাহা করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারাও পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটিগেটের সামনে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইম মুভার, লরির জট দেখা গেছে। ধর্মঘটের বিষয়টি অবগত না হওয়ায় অনেক চালক তাদের যানবাহন নিয়ে বন্দরের গেইটে আসেন। কিন্তু ধমর্ঘটের সমর্থনে শ্রমিকরা বন্দরের নয়টি জেটিগেটের প্রতিটির সামনে সকাল থেকে অবস্থান নেয়। তারা যানবাহনগুলো বন্দরে প্রবেশে বাধা দেয়। এছাড়া চলমান ধমর্ঘটের সমর্থনে মালিক-শ্রমিকরা সম্মিলিতভাবে বন্দরের নয়টি জেটিগেটের সামনে পর্যায়ক্রমে সমাবেশ করেছেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস স্বাভাবিক আছে। তবে কনটেইনার ও খালাস করা পণ্য বন্দরের বাইরে নিতে পারছেন না আমদানিকারকরা। সীমিত আকারে রফতানি পণ্য প্রবেশ করছে। বর্তমানে বন্দরের ইয়ার্ডে এখন প্রায় ৪৬ হাজারের মতো কনটেইনার জমে আছে।