রংপুর: তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।
এই কর্মসূচিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা—রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারীজুড়ে সর্বস্তরের মানুষকে ১৫ মিনিটের নীরবতা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। আয়োজকরা বলেছেন, এই কর্মসূচি উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-সংকটের বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কর্মসূচির আহ্বানে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যেখানে থাকবেন, বেলা ১১টায় কাজ বন্ধ করে ১৫ মিনিট নীরবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। যানবাহন চালকরা মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাক, বাস বা ট্রেন থামিয়ে অবস্থান করবেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান স্থগিত রাখা হবে।
আন্দোলন কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নীরবতা তিস্তা নদীর অস্তিত্ব রক্ষা এবং উত্তরাঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার দাবিতে এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদ।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এই কর্মসূচির ডাক দেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু না করে, তবে তিস্তাপাড়ের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিস্তা নদী শুধু একটি নদী নয়—এটি আমাদের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির প্রতীক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ১৫ মিনিটের নীরবতা হবে তিস্তাবাসীর সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি, যার মাধ্যমে জানানো হবে—তিস্তা বাঁচলে উত্তরবঙ্গ বাঁচবে, তিস্তা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।’
এই আন্দোলনের নেপথ্যে রয়েছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা, যা ১২ হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প। এর প্রথম পর্যায়ে (৫ বছর) ৯ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, যার মধ্যে চীনের কাছ থেকে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি তিস্তা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, তীর সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষিজমি রক্ষায় কাজ করবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে পানি ভাগাভাগির অমীমাংসিত ইস্যুর কারণে এটি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে।
এর আগে, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গত ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার তীরে ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচিতে লাখো মানুষ অংশ নিয়ে গণপদযাত্রা, মশাল মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। ৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ৯ অক্টোবর উপজেলা শহরগুলোতে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি, ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় তিস্তা নদীর উভয় তীরে ৩১টি স্থানে একযোগে মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়, যেখানে হাজারো মানুষ ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’, ‘তিস্তার ন্যায্য হিস্যা চাই’ এবং ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ বাস্তবায়ন চাই’ স্লোগান তোলেন।
গঙ্গাচড়ায় মশাল প্রজ্বলনের সময় আসাদুল হাবিব বলেন, ‘চীন সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, কিন্তু কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করছি না। নভেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে প্রকল্প ঝুলে যাবে।’
আন্দোলন কমিটির নেতারা জানান, নভেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই আন্দোলনের ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যা জনমনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।
আন্দোলনকারীরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।