ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার দুর্বল ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক মার্জ করার প্রসঙ্গে বলেছেন, এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ২০১৭ সালের আগে এতটা খারাপ ছিল না।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাজধানীর মালিবাগে ইউএনবি সংবাদ সংস্থার কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ’স ব্যাংকিং ক্রাইসিস: ফাইন্ডিং দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।
নূরুন নাহার আরও বলেন, ‘যেসব ইসলামী ব্যাংক মার্জ করা হচ্ছে ২০১৭ সালের আগে এগুলোর আর্থিক অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোকে যখন দখল করে নেওয়া হলো তারপর থেকে ব্যাংকগুলোর চিত্র পাল্টে যাওয়া শুরু করল। টাকা পাচার হওয়া ও অন্যায়ভাবে সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট অতিক্রম করা শুরু হয়ে গেল। অনেক নীতি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব রাজনৈতিক ডিরেকশনেই হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো থেকে টাকা পাচার না হলে এগুলোর অবস্থা আরও ভালো থাকত এখন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নর স্যার চাচ্ছেন দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে। তাই মার্জ করা হলে একটি ব্যাংক হবে, তবে ৪টি ব্যাংক তো কমবে। একটা শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করতে হবে।’
ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘আগে এমন ছিল ওমুকের একটা ব্যাংক হয়েছে, আমাদেরও একটা ব্যাংক হতে হবে। পুলিশের একটা ব্যাংক হতে হবে, আর্মিদের একটা ব্যাংক হতে হবে। আমাদের দেশের ব্যাংকের সংখ্যা শুনে বাহিরের দেশে অনেকে অবাক হয়ে যায় যে এত ব্যাংক। প্রয়োজনে ব্র্যাঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে, কিন্তু ব্যাংকের সংখ্যা কেন? একই সময় তিনটি এনআরবি ব্যাংক হয়েছে। তবে যেটা হয়ে গিয়েছে সেটা কিভাবে ওভারকাম করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।’
তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘যে জিনিস ঘটেছে তা অবশ্যই ভালো কিছু না। কারণ আমানতকারীর টাকা যদি লুট বা পাচার হয়ে যায় সেটা তো আসলেই কষ্টের বিষয়। আমানতকারীরা কেন এটার দায় নিবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিষয়ে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থায় যেতে হবে। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নয় কমার্সিয়াল ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ড অব ডিরেক্টর জড়িত ছিলেন।’
নূরুন নাহার বলেন, ‘একটা সময় ব্যাংকিং খাতের এনপিএলকে কার্পেটের নিচে রাখা হত। আসল তথ্য তুলে ধরা হত না। অনেক ব্যাংকের লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। তবে ৫ আগাস্টের পর দেখা গেছে এনপিএল অনেক থাকা সত্ত্বেও এসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিয়েছে।’
শেষে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক দলের কথা না শুনে কেউ যদি চাকরি ছেড়ে দিত, চাকরি ছাড়লে আরেকজন যিনি আসবেন তিনিও একই রকম কাজ করতে পারতেন।’
আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী পদ, এমনকি চেয়ারম্যান পদেও পেশাদার, যোগ্য ও বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, ব্যাংকের পরিচালকদের নিজেদেরকে ‘মালিক’ নয়, বরং সাধারণ আমানতকারীদের অর্থের ‘অভিভাবক ও উদ্যোক্তা’ হিসেবে বিবেচনা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে, যা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পরামর্শক (ঝুঁকি বিশ্লেষক ইউনিট) এমজিকে জুয়েল যৌথভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম জাহিদ, বিইউবিটি’র অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহবুব আলী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক আব্দুল মান্নান, সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এম কামাল উদ্দিন জসিম, সিনিয়র সাংবাদিক সালাউদ্দিন বাবলু, ইসলামী ব্যাংকের এফএভিপি শেখ মো. রিয়াজ উদ্দিন এবং বিজনেস জার্নালিস্ট ফরহাদ হোসেন তালুকদার প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউএনবি’র সম্পাদক মাহফুজুর রহমান।
উল্লেখ্য, মার্জ হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।