সিলেট: বহুল প্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের রাজনীতি এখন বেশ সরব। ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা শরিফুল হক সাজু।
দলের দুঃসময়ে পাশে থাকা, প্রবাসে থেকেও বিএনপির সংগঠনকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী করা এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা—এই তিন গুণেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছেন তিনি। তার নেতৃত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো—তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখা এবং তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা।
দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার পর শরিফুল হক সাজু এখন মাঠে নেমেছেন জনগণের পাশে দাঁড়াতে। বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, বাজার ও গ্রামে তিনি বিরামহীনভাবে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও বাড়ছে প্রতিদিন। স্থানীয় রাজনীতিতে তার এই ধারাবাহিক উপস্থিতি বড়লেখা-জুড়ীর রাজনীতিতে নতুন উচ্ছ্বাস তৈরি করেছে।
এদিকে, সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে রোববার (১৯ অক্টোবর) বৈঠকে বসছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ বৈঠকে যোগ দিতে সিলেট বিভাগের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই তালিকায় আছেন মৌলভীবাজার -১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাতার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুল হক সাজু।
প্রবাসে অবস্থানকালীন সময়ে শরিফুল হক সাজু কাতারে বিএনপির সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক কাজেও সক্রিয় ছিলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার রক্ষায় তিনি বহুবার সোচ্চার হয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তার প্রবাসী সংযোগ ও সংগঠক হিসেবে দক্ষতা এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজর কাড়ছে। স্থানীয় তৃণমূল বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী ইতোমধ্যে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসে অর্জিত অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা ও স্থানীয় সংযোগ—এই তিন উপাদান শরিফুল হক সাজুকে মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। দলের মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় অনুমোদন ও স্থানীয় সমর্থন দুটোই জরুরি। বড়লেখা-জুড়ী আসনে বিএনপির অন্য প্রার্থী সক্রিয় থাকায় অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতাও রয়েছে।
এরপরও তৃণমূলের আস্থা, প্রবাসী সমর্থন ও দুঃসময়ের অবিচল ভূমিকার কারণে সাজু এখন এই আসনের অন্যতম আলোচিত প্রার্থী। রাজনৈতিক মহলে বলা হচ্ছে, যদি শরিফুল হক সাজু মনোনয়ন পান, তাহলে বড়লেখা-জুড়ী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হবে, যা আগামী নির্বাচনের অন্যতম আকর্ষণ হতে পারে।
নিজের রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা তুলে ধরে শরিফুল হক সাজু বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকেই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমার নির্বাচনি এলাকায় ছাত্রদল, যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছি। সিলেট মদন মোহন কলেজে লেখাপড়ার সুবাদে ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘‘দলের দুঃসময় থেকে এখন পর্যন্ত দল পুনর্গঠনে তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অসহায় মানুষের পাশে দাড়াঁতে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি, যা এখনও চলমান। নিজেকে একজন স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে ধরে রেখেছি।’
মনোনয়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করেন এবং মনোনয়ন দেয় তবে জনগণের আস্থা অর্জন করে বিপুল ভোটে বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারবো বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
সাজু আরও বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবে বিএনপি।’
নিজ আসন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বড়লেখা-জুড়ী উপজেলার মানুষ দীর্ঘদিন উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের হেভিওয়েট মন্ত্রী থাকার পরও এই অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এখানকার প্রতিটি পরিবার উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে।’
উল্লেখ্য, এই আসনে শরীফুল হক সাজু ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন-একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নাসির উদ্দিন মিঠু, ও প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরীর কন্যা ব্যারিস্টার জহরত আদিব চৌধুরী।