বগুড়া: যমুনার চর পাড়ে একসময় যেখানে নদীভাঙনের ভয় ছিল নিত্যসঙ্গী, আজ সেখানে গড়ে উঠছে নতুন সম্ভাবনার ফসলের মাঠ। প্রতি বছর পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষিদের ব্যস্ততা বাড়ে— শুরু হয় মরিচ চাষের তোড়জোড়। তবে এবার চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন। দেশি জাতের মরিচের জায়গা দখল করছে উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিড) জাতের মরিচ। বাম্পার ফলন ও দাম দুটোই ভালো হওয়ায় দিন দিন এই ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৮৫০ হেক্টর জমিতে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয় সারিয়াকান্দি উপজেলায়। এছাড়া হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ হয়েছে ২৫০ হেক্টর জমিতে। আর স্থানীয় জাতের বা দেশী জাতের মরিচ চাষ হয়েছে ৬০০ হেক্টর জমিতে।
জানা গেছে, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলে প্রতি বছরই বাড়ছে মরিচের আবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই অঞ্চলের মরিচ চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে বড় বড় মসলা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছে এই মরিচের চাহিদা বেশি। এ জেলার মরিচের রং এবং ঝাল বেশি হওয়ায় কোম্পানিগুলো মরিচ কেনার জন্য প্রতিনিধির মাধ্যমে মৌসুমের শুরু থেকেই তৎপরতা চালাতে থাকে।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বছর যমুনার পানি নেমে যাওয়ার অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন চরাঞ্চলের মরিচ চাষিরা। যমুনার বুক খালি হলেই কপাল খুলে যায় নদী ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর। পানি নেমে যাওয়া মাত্র চরের উর্বর মাটিতে পা ফেলেন তারা। তোড়জোড় শুরু করেন মরিচ চাষে। প্রতিবছরই মরিচ ফলানোর কাজটি করেন চরাঞ্চলের চাষিরা। তবে চলতি মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় মরিচ চাষে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। এখন জেলাজুড়ে কৃষকরা মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
ধুনট উপজেলার চাষি সোহেল রানা জানান, মরিচ চাষে ব্যয়ের চেয়ে পরিশ্রম বেশি হয়। তাই অনেক কৃষকই মরিচ চাষ করতে চান না। তবে একটু পরিশ্রম করলে অল্প জমিতে এবং অল্প পুজিতে মরিচ চাষ করে অধিকতর লাভবান হওয়া যায়।
আরেক চাষি লিখন মিয়া জানান, গত একমাস আগে বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার একটি নার্সারী থেকে কারিশমা জাতের ১ হাজার ৭০০ পিস মরিচ গাছ ২ হাজার ১০০ টাকায় কিনে জমিতে রোপন করেছেন। এখন গাছে ফুল ও ফল ধরছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড কারিশমা জাতের এই মরিচ গাছ সারা বছরই চাষ করা যায়। এই জাতের মরিচ সাধারণত রোপনের ৬০ দিনের মধ্যে তোলা যায়। প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর মরিচ সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি মরিচের দৈর্ঘ্য ১০-১১ সে.মি হয়ে থাকে।
তবে শুধু লিখন মিয়া ও সোহেল রানাই নয়, তার মতো অনেক কৃষকই এখন হাইব্রিড মরিচ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। হাইব্রিড জাতের মরিচ অধিকতর ফলন হওয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, ‘বগুড়ার মরিচের দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। এবার জেলার ৮৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। জেলায় ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মরিচের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবহাওয়া অনুকূল থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি জানান, অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় এবার হাইব্রিড মরিচের চাষ বেড়েছে। আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি।’