ঢাকা: হযরাত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তৈরি পোশাক খাতের কাঁচামাল ও গুরুত্বর্পূণ স্যাম্পল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, সে বিষয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থার দাবিসহ বেশ কয়েকটি দাবি করেছে সংগঠনটি।
রোববার (১৯ অক্টোবর) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান এসব কথা বলেন।
এ সময় বিজিএমইএ’র পরিচালক ফয়সাল সামাদ, পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান, পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান, পরিচালক রুমানা রশীদ, পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল, সাবেক পরিচালক নজরুল ইসলাম, বিজিএমইএ এর জনসংযোগ ও প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদ কবির, এয়ারপোর্ট সেলের চেয়ারম্যান মো. নিশের খান উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএমইএ জানায়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। বিজিএমইএ মনে করে, এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় দেশের রফতানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ফলে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিএমইএ নেতারা বলেন, পোশাক শিল্পে উচ্চমূল্যের পণ্য পরিবহন ও জরুরি শিপমেন্টের ক্ষেত্রে আকাশপথ ব্যবহার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ফলে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যসামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধ্বংস হওয়া মালামালের মধ্যে পোশাক তৈরির মূল্যবান কাঁচামাল, এক্সেসরিজ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অনেক স্যাম্পল (নমুনা) পণ্য ছিল। এই স্যাম্পলগুলো হারানো মানে ভবিষ্যৎ অনেক ব্যবসায়িক সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিজিএমইএ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান সাংবাদিকদের জানান, বিজিএমইএ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। সদস্যদের নির্ধারিত ফরমেটে ক্ষতি হওয়া পণ্যের তালিকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি অনলাইন ডেটা কালেকশন পোর্টালও খোলা হয়েছে। বিজিএমইএ খুব দ্রুত সমস্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এর সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা করবে।
বিজিএমইএ’র দাবিগুলো হলো—
- এই অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, সে বিষয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুর করা।
- ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা।
- পোশাক শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে বন্দরের বর্তমান পরিস্থিতি নির্বিশেষে যেন অন্যান্য নিয়মিত শিপমেন্টগুলোও স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে, তার জন্য সকল প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুততর করা।
- রফতানি পণ্য খোলা জায়গায় না রেখে বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকায় পণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি না হয়।
প্রসঙ্গত, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তারা বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পোশাক উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ ও পোশাক শিল্পের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন। এ সময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বিজিএমইএ নেতাদেরকে শিল্পের আমদানি করা কাঁচামাল ৭২ ঘণ্টার স্থলে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে খালাস করার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বলেছেন আপাতত আমদানিকৃত কাঁচামালগুলো কার্গো ভিলেজের ৩ নম্বর ভবনে রাখা হবে। বিজিএমইএ ঢাকার বিমান বন্দরে পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত মালামাল ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে খালাস করার জন্য সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছে।