Monday 20 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেটে শতবর্ষী ঐতিহ্যের মৃত্যু
ভেঙে ফেলা হচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী ‘মিনিস্টার বাড়ি’

জুলফিকার তাজুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২০ অক্টোবর ২০২৫ ২১:৪৪ | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ২২:১৪

ভেঙে ফেলা হচ্ছে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ‘মিনিস্টার বাড়ি’। ছবি: সারাবাংলা

সিলেট: সিলেটের নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় নিঃশব্দে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এক শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা—সাবেক মন্ত্রী আবদুল হামিদের পুরনো বাড়ি। সময়ের সাক্ষী এই বাড়িটি ছিল না কেবল একটি স্থাপনা, বরং সিলেটের নগর উন্নয়ন ও স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল।

বাড়ির মালিকপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থাপনাটি ‘ব্যবহার অনুপযোগী’ হয়ে পড়েছিল। বাড়ির ছাদে ফাটল দেখা দেয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় ছিল না। তাদের দাবি—‘আমাদেরও মন খারাপ হচ্ছে, কিন্তু ছাদ ডেমেজ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ভাঙতে হচ্ছে।’

তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিকদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেজাউল করিম আলো নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘শুধু ছাদ ডেমেজ হওয়ার কারণে শতবর্ষী স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। যদিও এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি, কিন্তু এমন একটি শৈল্পিক ইমারত এখন আর নির্মাণ করা সম্ভব নয়। এরকম ঐতিহ্য ধ্বংস করা যতটা সহজ, সৃষ্টি করা তার চেয়ে বহু গুণ কঠিন। ব্যথিত হলাম, মর্মাহত হলাম।’

কামরুজ্জামান রনি’ নামের একজন মন্তব্য করেন, এই ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি বিক্রয়ের জন্য ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেখেছি।

জালাল আহমেদ জালাল নামের আরেকজন লিখেন, সিলেট থেকে বাসে সুনামগঞ্জ যাওয়ার পথে এই বাড়িটি দেখতাম। এ বাড়িতে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বিশ্রাম নিয়েছেন।

বাড়ির মালিকপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থাপনাটি ‘ব্যবহার অনুপযোগী’ হয়ে পড়েছিল। ছবি: সারাবাংলা

সিলেট শহরের পুরনো স্থাপত্যগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার দৌড়ে। কিন্তু প্রতিটি ধ্বংসের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে শহরের ইতিহাসের টুকরো, হারিয়ে যাচ্ছে সেই কারুকাজ, সেই নান্দনিক ছোঁয়া যা একসময় সিলেটকে আলাদা করে চিনিয়েছে।

স্থাপত্যবিদদের মতে, শতবর্ষী ভবনগুলো কেবল ইট-পাথরের দেয়াল নয়—এগুলো একটি সময়ের সংস্কৃতি, জীবনধারা ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এমন স্থাপনা ভাঙার আগে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়া দুঃখজনক।

একজন নগর ইতিহাসবিদ মন্তব্য করেছেন, ‘সিলেটে ঐতিহ্য সংরক্ষণের কোনো নীতিমালা না থাকায় একের পর এক পুরনো স্থাপনা হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী প্রজন্ম কেবল ছবিতেই দেখবে এই ইতিহাস।’

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর তালিকায় যে বাড়িটির নাম একসময় গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হতো, সেটিই আজ ভেঙে পড়ছে বুলডোজারের নিচে। ইট-সিমেন্টের স্তূপে পরিণত হচ্ছে শতবর্ষের গল্প, হারিয়ে যাচ্ছে এক নগর-ঐতিহ্যের মূল্যবান অধ্যায়।

উল্লেখ্য, আব্দুল হামিদ ছিলেন তৎকালীন আসামের এমএলএ এবং বৃহত্তর আসামের শিক্ষামন্ত্রী। তিনি তৎকালীন বিধানসভার স্পিকারও ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকারে শিক্ষামন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সিলেটের কীনব্রীজ তৈরীর কাজেও তিনি মূখ্য ভুমিকা পালন করেন। সিলেটের এই বাড়িটি ‘মিনিষ্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত।